এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : এবার একাদশ শ্রেণীর সব আসনেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে মেধার ভিত্তিতেই। আবেদনপত্রে কলেজ ও মাদ্রাসার পছন্দক্রম দিতে হবে। একবার আবেদন দাখিল করলে সেই পছন্দক্রম আর পরিবর্তন করা যাবে না। শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এমনি নানা বিধান রেখে সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.moedu.gov.bd) একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে এবার প্রথমবারের মতো কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন কলেজে (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা-বিএম) আলাদা আবেদন নেয়া হবে। অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পর এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছুদের আবেদন গত কয়েক বছর একসঙ্গে নেয়া হতো। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, বিএমে ৭-৮ বছর আগে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদেরও ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় সর্বোচ্চ দু’বছর আগে পাস করা শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায়। একসঙ্গে আবেদন নেয়া হলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে এবার আলাদা আবেদন নেয়া হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলাদা করা হলেও সাধারণ শিক্ষার কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি কলেজে আবেদন ১৩ মে থেকেই নেয়া হবে। মোট তিন দফায় শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাবে। ফল প্রকাশও হবে তিনবার। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২৪ মে পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এছাড়া ১৯ ও ২০ জুন দ্বিতীয় এবং ২৪ জুন তৃতীয়বারের জন্য আবেদন করা যাবে। মোট তিন দফায় আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। কলেজ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত (নিশ্চায়ন) করতে হবে। নইলে শিক্ষার্থীর কলেজ-মাদ্রাসায় বরাদ্দকৃত আসনের পাশাপাশি আবেদনটিও বাতিল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ফের আবেদন করতে হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষার্থীদের ভালো সেবা দিতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়ায় এবার চারটি নতুনত্ব আনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কলেজ-মাদ্রাসার সব আসনই পাবে মেধাবীরা। প্রাধিকার কোটায় আমরা ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করি। ওই কোটার শিক্ষার্থীদের আবেদন আলাদা বিবেচনা করা হবে। মেধার ভিত্তিতে চান্স পেয়ে গেলে কোটায় আর কাউকে নির্বাচিত করা হবে না। যদি কারও কোটার সুবিধা লাগে সে ক্ষেত্রে কলেজে ও মাদ্রাসায় আবেদন দেখে বাড়তি আসন বরাদ্দ করা হবে। তিনি বলেন, এবার শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্রেই প্রতিষ্ঠানের পছন্দক্রম দিতে হবে। সে অনুযায়ী কলেজ বরাদ্দ করা হবে। আবেদন দাখিলের পর পছন্দক্রম পরিবর্তন করা যাবে না। কলেজ পাওয়ার পর ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে তার মনোনয়ন বা আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে।
সোমবার প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নীতিমালায় অনুমতি বা স্বীকৃতিবিহীন কলেজ ও মাদ্রাসায় ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথমপর্যায়ে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। এর আগে এসএসসি ও দাখিলের ফলাফলের পুনঃনিরীক্ষণে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ৫ ও ৬ জুন আবেদন নেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ের ফলে কলেজ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরকে ১১ থেকে ১৮ জুনের মধ্যে মনোনয়ন নিশ্চায়ন করতে হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন নেয়া হবে ১৯ ও ২০ জুন। ফল প্রকাশ করা হবে ২১ জুন। একইদিন পছন্দক্রম অনুযায়ী মাইগ্রেশনের ফল (প্রথমবার কলেজ পছন্দ না হওয়া প্রার্থীদের বিকল্প কলেজ) প্রকাশ করা হবে। এই দফায় নির্বাচিতরা ২২ ও ২৩ জুন মনোনয়ন নিশ্চায়ন করবে। তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নেয়া হবে ২৪ জুন। পরের দিন দ্বিতীয় পর্যায়ের মাইগ্রেশন এবং তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে।
তিন দফা আবেদন গ্রহণ ও ফল প্রকাশের পর ২৭ জুন শুরু হবে কলেজে ভর্তি কার্যক্রম। ৩০ জুন পর্যন্ত কলেজের টাকা জমা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি সম্পন্ন করবে। ১ জুলাই শুরু হবে তাদের ক্লাস।
নীতিমালা অনুযায়ী, এবারও ১১ শতাংশ আসনে কোটায় ভর্তি করা হয়। বিশেষ কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা-৫ শতাংশ, বিভাগীয় ও জেলা সদর-৩ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দফতরসমূহ ২ শতাংশ, বিকেএসপি-০.৫ এবং প্রবাসী ০.৫ শতাংশ আছে। তবে এসব কোটায় উপযুক্ত শিক্ষার্থী না পাওয়া গেলে অন্য কাউকে ভর্তি করা যাবে না। যে শিক্ষার্থী যে প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাস করেছে, সে সেখানে একাদশ শ্রেণীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, গতবারের মতো এবারও অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন নেয়া হবে। অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করা যাবে। এ জন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। মোবাইল ফোনে প্রতি এসএমএসে একটি করে কলেজে আবেদন করা যাবে। এর জন্য ১২০ টাকা দিতে হবে। তবে এসএমএস এবং অনলাইন মিলিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন না। পছন্দক্রম অনুযায়ী একটি কলেজে ভর্তির অনুমোদন দেয়া হবে।
এছাড়াও মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা, পৌর জেলা সদরে ২ হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না।