এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আইনি বাধা কাটায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের জন্য রোববার নতুন তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী রোববার কমিশন সভা করে ঠিক করবে কবে নির্বাচন হবে।”
হাই কোর্ট সপ্তাহের শুরুতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের যে আদেশ দিয়েছিল, বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ তা বাতিল করে দিয়েছে।
সেই সঙ্গে আগামী ২৮ জুনের মধ্যে ঢাকার লাগোয়া ওই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর আবেদন এবং নির্বাচন কমিশনের লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।
১৫ মে ভোটের দিন রেখে গত ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। সে অনুযায়ী ভোটের প্রস্তুতিও চলছিল।
কিন্তু ঢাকার সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ রিট আবেদন করলে ভোট আটকে যায়।
বুধবার গাজীপুরে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, লিভ টু আপিলের রায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে গেলেও তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে ওই ভোটের আয়োজন করা আর সম্ভব হবে না, কারণ স্থগিতাদেশের কারণে বেশ কয়েক দিন সময় নষ্ট হয়েছে।
আপিল বিভাগ ভোটের জন্য কোনো সময় বেঁধে না দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে সিইসি বলেছিলেন, “এর জন্য পুনঃতফসিল ঘোষণার প্রয়োজন হবে না, শুধু নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করলেই হবে।”
নির্বাচন আয়োজনে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর বিকালে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিবকে নিয়ে বৈঠক করেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। পরে ইসি সচিব কমিশনের অবস্থান সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
আদালতের নির্দেশনার সত্যায়িত অনুলিপি কমিশন পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “গাজীপুরে ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে আমাদের। ১৫ মে যেহেতু গাজীপুরে নির্বাচন হচ্ছে না, সেহেতু কবে, কয়দিন সময় দেওয়া হবে তা নিয়ে কমিশন ১৩ মে বৈঠকে বসবে। ওই কমিশন সভায় গাজীপুরের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে।”
রোজার মধ্যে ভোট হবে কিনা এবং প্রচারের জন্যে বাকি থাকা সাত দিন সময় দেওয়া হবে কিনা বা রোজার পরে ভোট হবে কিনা জানতে চাইলে কমিশন সচিব বলেন, এসব বিষয়েও কমিশন সভায় আলোচনা হবে।
নতুন সময় কখন, কীভাবে : ইসি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে সাধারণত রোজার মধ্যে কোনো সাধারণ নির্বাচন করা হয় না। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর পর্যাপ্ততা, বাস্তবতা ও ভোটের পরিবেশ বিবেচনায় অতীতে বড় কোনো সাধারণ বা উপ নির্বাচন রোজায় করা হয়নি।
অবশ্য ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রের উপ নির্বাচন রমজানের মধ্যেই হয়েছিল। আর এমনিতে রোজার মধ্যে নির্বাচন করতে কোনো আইনি বাধা নেই।
এখন রোজায় ভোট না করলে ইসিকে ১৫-১৭ জুন ঈদের ছুটির পরের কোনো তারিখ ভাবতে হবে। আবার ২৫ থেকে ২৭ জুন সিইসি থাকবেন ইন্দোনেশিয়ায়। ফলে ২৩ বা ২৪ জুন ভোট করার কথা ভাবতে পারে কমিশন।
কমিশনের যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ভোটের নতুন তারিখ দেওয়া হলেও প্রচারের জন্য আর ৭ দিন সময় পাবেন প্রার্থীরা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান অনুযায়ী পুনঃভোটের তারিখ নির্ধারণ হবে। সেক্ষেত্রে প্রচারের সময়ও উল্লেখ করে দেবে কমিশন। প্রার্থীসংখ্যা কোনো হেরফের হবে না। ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রীও নতুন করে আনার প্রয়োজন হবে না।