এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : আগ বাড়িয়ে নাক গলানো স্বভাবের কারণে আগে থেকেই পুলিশি রাষ্ট্রের তকমা যুক্তরাষ্ট্রের গায়ে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে এসে তা কিছুটা লঘু হয়। কিন্তু দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক একগুঁয়েমিতে পুরনো বদনাম আবার নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পূর্বসূরি যুদ্ধবাজ নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। এখন তিনিই হয়ে উঠেছেন বিশ্বের সেরা মাস্তান। সারাবিশ্বে একাই মাস্তানি করে যাচ্ছেন।
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে যখনই কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতো, তাকে বলা হতো ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের’ প্রেসিডেন্ট। প্রকাশ্যে না বললেও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে গালি দেয়। তবে ইরান, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, কিউবা যুক্তরাষ্ট্রের মুখের ওপরই দেশটিকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে। সামরিক উপস্থিতি ও পরমাণু অস্ত্রের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বত্র একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে দেশটি। জর্জ বুশের আমলে সে ভয় আরও বেড়ে যায়। ব্যাপক মারণাস্ত্রের মিথ্যা অভিযোগে সার্বভৌম রাষ্ট্র ইরাকের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেন তিনি। বারাক ওবামার আমলে তা কিছুটা কমে। দক্ষ প্রশাসন ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনেন তিনি। বেশির ভাগ দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে এসে ‘ওবামা কৌশল’ ডুবে ফুলেফেঁপে উঠেছে ‘বুশ দর্শন’। পুরো কৃতিত্বই ট্রাম্পের। গণতান্ত্রিক ক্ষমতার মসনদে বসে রীতিমতো স্বৈরশাসন শুরু করেছেন ট্রাম্প। নিজ দেশের অভিবাসী আইন, ওবামা কেয়ার থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, চীনসহ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর ওপরও ‘মাস্তানি’ করছেন ট্রাম্প। ভাবটা এমন যে, ‘তিনি যেটা বলবেন সেটাই ঠিক, সেটাই করতে হবে।’
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে যে আলোচনা চলছিল শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করেন। তবে ওবামার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভয়ের পরিবেশ আবার ফিরে এসেছে। নানা কর্মকাণ্ড আর হুমকি-ধামকির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই সেই পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছেন। কাউকেই মানছেন না তিনি।
ইরান পরমাণুর কথাই ধরা যাক। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অপর চারটি দেশ ও জার্মানিকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু স্বাক্ষরকারী পাঁচটি দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি এবং পর্যবেক্ষক ইউরোপীয় ইউনিয়নের হুশিয়ারি-সতর্কতা সত্ত্বেও ইরান পরমাণু চুক্তি ছুড়ে ফেললেন ট্রাম্প।
এখানেই শেষ নয়, পাঁচটি দেশকে হুশিয়ারি দিলেন তিনি। তিনি বললেন, চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। গত ৭০ বছর ধরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যা সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছেন পুরো বিশ্বের সতর্কতা সত্ত্বেও জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করলেন। একক সিদ্ধান্তে জলবায়ু সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক চুক্তি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করলেন তিনি। মোটা দাগে বলা যায়, তিনি যে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এগোচ্ছেন তাকে মাস্তানি নীতি ছাড়া অন্যকিছু বলা যায় না।