এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ৪ দফা আলটিমেটাম শেষে ফের কঠোর আন্দোলনে নামছেন আন্দোলনকারীরা। সর্বশেষ আলটিমেটাম অনুযায়ী রোববার বিকাল পাঁচটায় প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আজ সকাল ১০টা থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এ ঘোষণা দেয়।
এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। মিছিলটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার, কার্জন হল, হাইকোর্ট, মৎস্যভবন, শাহবাগ হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় বৃষ্টি এলে বৃষ্টিতে ভিজেই কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে দুপুরে টিএসসিতে এসে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এ সময় সেখানে ছিলেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, মো. রাশেদ খান, ফারুক হোসেন প্রমুখ।
কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের দাবিতে ২৬ এপ্রিল আলটিমেটাম দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এ সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হলে ১ মে থেকে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। এ অবস্থায় ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধ এবং মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসে ৭ মে পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এই সময়েও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ৯ মে মানববন্ধন করে ১০ মে’র মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে ফের আলটিমেটাম দেন তারা। কিন্তু চতুর্থ দফা আলটিমেটামে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেন তারা। ওই বিক্ষোভেই প্রথম আজ থেকে লাগাতার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচির কারণে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। আর বিক্ষোভ মিছিলে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন কই?’, ‘কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দিন, আমরা পড়ার টেবিলে বসতে চাই’, ‘আর নয় কালক্ষেপণ, দিতে হবে প্রজ্ঞাপন’ ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে হাসান আল মামুন বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতার ওপর হামলা করা হয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ছাত্র সমাজের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করার আহ্বান জানাই। আর দাবি না মানলে আজ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীরা ছাত্র ধর্মঘট ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা ছাত্র সমাজ বর্জন করবে।
নুরুল হক বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছি। ৩২ দিন পার হলেও এখনও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে সরকার ওয়াদা করেছে ৭ মের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হবে। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন এখনও জারি করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন কোটা থাকবে না। তার কথাই অলিখিত আইন। কিন্তু এরপরও আমরা শুনছি, এখন কমিটি করা হয়েছে। আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না।’ ছাত্ররা কারও প্রতিপক্ষ নয়- উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপন জারি হলে কোনো ছাত্র আর রাজপথে থাকবে না। আমরা আনন্দ মিছিল বের করব। তাই আজ বিকাল পাঁচটার মধ্যে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করুন, না হলে আমরা আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করব।’
পাঁচ দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’। এগুলো হল- কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে খালি থাকা পদগুলোতে মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া; কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেয়া; সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একবারের বেশি ব্যবহার না করা। ১৭ ফেব্রুয়ারি এ আন্দোলন শুরু হয়। নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এই আন্দোলনকে ঘিরে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পাঁচটি মামলা করেছে পুলিশ। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। আর বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধায়।