এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপ্রধান, দরিদ্র বা দুর্বল জনগোষ্ঠী এমনকি অসহায় অভিবাসীদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করছেন। অতি সম্প্রতি তিনি অভিবাসী শিশুদের তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি এই নীতি থেকে পিছিয়ে এলেও শিগগিরই অন্যভাবে তাঁর নতুন আক্রমণ দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনেক বিশ্লেষক ট্রাম্পের এসব আচরণকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন। তবে আমাদের ভাবনাটা ভিন্ন। আমেরিকার বহু স্বনামধন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আমরা একমত। তাঁদের মতো আমরাও বিশ্বাস করি, ট্রাম্প মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এবং এটি বিশ্বের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ট্রাম্পের আচরণে তিনটি ভয়ানক লক্ষণ ফুটে উঠছে—ভীতি বাতিকগ্রস্ততা, পরমতসহিষ্ণুতার অভাব ও ধর্ষকামিতা।
ভীতি বাতিকগ্রস্ত লোকেরা যাকে-তাকে নিজের জন্য হুমকি মনে করে এবং অহেতুক সন্দেহের বশে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। পরমতসহিষ্ণুতার অভাবগ্রস্ত মানুষ নিজের চিন্তাভাবনাকেই স্বতঃসিদ্ধ মনে করে; তার বিরুদ্ধে গেলেই সে রেগে যায়। নিজের মত প্রতিষ্ঠা বা স্বার্থসিদ্ধির জন্য কারও ক্ষতি করতে হলে সে তা নির্দ্বিধায় করে এবং তার জন্য কোনো অনুশোচনাও তার থাকে না। আর ধর্ষকামী লোক অন্যকে, বিশেষ করে সে যাকে প্রতিপক্ষ বলে মনে করে, তাকে নিপীড়ন করে পৈশাচিক সুখ পায়।
আমরা বিশ্বাস করি, এই তিনটি রোগলক্ষণই ট্রাম্পের চরিত্রে প্রবলভাবে আছে। তাঁর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ, তাঁর জীবনের ঘটনাবলি বিশ্লেষণ এবং তাঁর সম্পর্কে অন্যদের মূল্যায়ন পর্যালোচনা করেই আমরা এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমরা এর আগেও ট্রাম্প মানসিকভাবে সুস্থ কি না, তা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করার দাবি তুলেছিলাম। এখনো সেই দাবিতে অনড় আছি। তবে ট্রাম্প যে পৃথিবীকে একটি ভয়ানক বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তা নিশ্চিত করে বলার জন্য আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ঘোষণার দরকার নেই।
ট্রাম্প তাঁর আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের সাফাই গাইতে গিয়ে নির্বিকারভাবে একটানা মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একটি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্প গদিতে বসার পর তিন হাজারের বেশি মিথ্যা কথা বলেছেন। পত্রিকাটির গবেষণায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাঁর মিথ্যা কথা বলার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। তার চেয়ে ভয়ের কথা হলো ট্রাম্পের চারপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের কেউ তাঁর ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন না; বরং তাঁকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। তাঁর সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যাঁদের বেছে নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দুর্নীতিগ্রস্ত ও তাঁর মতোই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্পের মানসিক রোগলক্ষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বলে মনে হচ্ছে। যেমন ধরুন, তিনি এখন বারবার বলেই যাচ্ছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে তাঁর ধোঁয়াশাপূর্ণ বৈঠক নাকি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের হুমকি শেষ করে দিয়েছে। মেক্সিকো থেকে আসা অভিবাসীদের কাছ থেকে তাঁদের সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করার এই নীতি নাকি তিনি প্রথম নেননি। ডেমোক্র্যাটরাই নাকি এর জন্য দায়ী।
ওয়াশিংটন পোস্ট ট্রাম্পের সম্প্রতি দেওয়া একটি এক ঘণ্টার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, সেখানে তিনি ২৯টি মিথ্যা কিংবা ভুল পথে পরিচালিত করার মতো তথ্য দিয়েছেন। যেকোনো বিচারে এই পরিমাণ অসত্য বলার প্রবণতা মানসিক রোগের সুস্পষ্ট লক্ষণ।
ট্রাম্প যাদের ওপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারছেন না, তাদের তিনি হুমকি-ধমকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। যখন ছোট হুমকিতে কাজ হচ্ছে না, তখন তিনি বড় ধরনের হুমকি দিচ্ছেন। আগ্রাসনমূলক নীতি দিয়ে তিনি সবাইকে অনুগত রাখতে চান। তাঁর এই আচরণের কারণেই কানাডা, মেক্সিকো, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ বেধে গেছে। গোঁয়ার্তুমি করে তিনি একতরফাভাবে ইরান পারমাণবিক চুক্তি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে গেছেন।
এখন বড় সমস্যা হলো ট্রাম্পের এই অসত্য কথা ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে তাঁর সমর্থক ও কিছু বিশ্লেষক সাহসী ভাষণ ও কাজ বলে বাহ্বা দিচ্ছেন। এটি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এটি যে আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের জন্যই ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনবে, তা অনেকেই বুঝতে পারছে না। ট্রাম্পকে অভিশংসন অথবা সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর আবাহন ছাড়া এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। প্রথম আলো
লেখক : জেফরি ডি. স্যাক্স কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এবং ব্যান্ডি এক্স. লি ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের ফরেনসিক সাইকিয়াট্রিস্ট