এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ৬ বছর ধরে অসংখ্য বৈঠক, সেমিনারসহ নানা প্রক্রিয়ায় একটি খসড়া শিক্ষা আইন করার পরও সেখানে নানা অসঙ্গতি। এ পর্যন্ত ৩ বার মন্ত্রিসভায় খসড়াটি উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হলেও প্রতিবারই নানা পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। শেষ পর্যন্ত নতুন নাম ও বিষয়বস্তু নিয়ে ফের আইনটি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
কথা হয় বৈঠকের সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদের সঙ্গে। এ তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছিল। বেশকিছু পর্যবেক্ষণসহ ফেরত এসেছে। তিনি বলেন, আসলে শিক্ষা নিয়ে নানা আইন রয়েছে। এখন আমাদেরকে সেগুলো সমন্বয়ের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাই এখন যেটা হচ্ছে তার নাম ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে। আমাদের পর্যায়ে কাজ শেষ হলে তা ফের নানা ধাপ অতিক্রম করে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
জানা গেছে, খসড়া শিক্ষা আইনটি অনুমোদনের জন্য গত বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছিল। এর আগে খসড়া নিয়ে এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে পর্যালোচনা হয়। সেখান থেকে ১৩টি পর্যবেক্ষণসহ খসড়াটি গত মে মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর ওই পর্যবেক্ষণের ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দফতর-অধিদফতরে মতামত চাওয়া হয়। আজকের বৈঠকে সেসব মতামত নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এ নিয়ে আলাপ হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দু’জন কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা বলেছেন, এবার নিয়ে মোট তিনবার মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে ফেরত এসেছে খসড়া শিক্ষা আইনটি। মূলত আইনটি তৈরিতে অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, খসড়ায় ব্যাপক অসামঞ্জস্যতা, বৈপরীত্য ও বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি থাকায় এটি বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হচ্ছে। খসড়া তৈরিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দূরদর্শিতার অভাব ফুটে উঠেছে। কেননা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের ধারা যথাযথভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। রহস্যজনক কারণে বিভিন্ন পক্ষকে খুশি করার ছাপ খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারায় স্পষ্ট হয়েছে। ফলে খসড়াটি বার বার ফেরত আসা এবং এর পরিণতি হচ্ছে, বর্তমান সরকারের মেয়াদে হয়তো আর শিক্ষা আইনটি আলোর মুখ না-ও দেখতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আইন, বিধি, প্রবিধান ও রীতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত আইন বা সংশোধনীর বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণ (যদি থাকে), আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের উদ্দেশ্য ও এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি, কনভেশন, সমঝোতা স্মারক, সিদ্ধান্ত, প্রটোকল খতিয়ে দেখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এসব ব্যাপারে হোমওয়ার্ক করে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ‘শিক্ষা আইন-২০১৮’ প্রণয়নের জন্য একটি খসড়া আইন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বিদ্যমান আইনের বিধান ও প্রস্তাবিত খসড়া আইনের বিধানসমূহের সামঞ্জস্য/অসামঞ্জস্য পর্যবেক্ষণ ও যাচাইক্রমে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় খসড়াটি পুনর্বিন্যাস করবে।’ পরে ‘বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কী কী আইন/বিধি/প্রবিধানমালা বিদ্যমান আছে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখায় পাঠিয়ে কোনো মতামত থাকলে তা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হল।’
উল্লেখ্য, ফেরত আসা খসড়া শিক্ষা আইনে প্রশ্নফাঁস, কোচিং বাণিজ্য, নোটগাইডসহ নানা ইস্যু আছে। এসব বিষয়ে একদিকে যেমন প্রচলিত আইন রয়েছে, আরেকদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নিয়েও ‘বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আইন-১৯৯০’ আছে। এভাবে শিক্ষার স্তর, পাঠ্যবই, এমপিও, শিক্ষক নিয়োগসহ নানা দিক আছে। এর প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আইন, বিধি ও নীতিমালা আছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান আইনের সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনের সম্পৃক্তকরণে অসামঞ্জস্যতা আছে। যে কারণে খসড়া আইনটিকে মন্ত্রিসভায় তোলার লক্ষ্যে গত ২৬ এপ্রিল তৃতীয় দফা বৈঠকে বসেও ‘আইনের খসড়া পরীক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি’ কোনো সুপারিশ করতে পারেনি। বরং খসড়াটির বিভিন্ন ধারা-উপধারা পর্যালোচনা করে কমিটি নানা রকম ত্র“টি, পরস্পরবিরোধী তথ্য এবং ভাষাগত সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারা পেয়ে পর্যবেক্ষণসহ ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষা আইনটি ফেরত এসেছে। এখন এর ওপর দেয়া পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আমরা পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।