এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর ও খুলনা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিন সিটিতে ভিন্ন কৌশল নেবে বিএনপি। দলীয় পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া ও কেন্দ্র দখল প্রতিরোধ করবে দলটি। প্রতিটি কেন্দ্র পাহারার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ওই বৈঠক হয়। সিলেটে জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর মেয়র প্রার্থীকে সরে যেতে আর কোনো অনুরোধ না করারও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে বরিশাল সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, রাজশাহী সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিলেট সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুন অর রশিদ, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, বরিশালের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বৈঠকে সিলেটে জামায়াতের মেয়র প্রার্থীকে সরে যেতে আর অনুরোধ না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে যে জামায়াতের প্রার্থী মাঠে থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। জোটের ঐক্য অটুট রাখার স্বার্থে এ নিয়ে আর কথা না বলারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে কিছু ওয়ার্ডে জামায়াত কাউন্সিলর পদে ছাড় দেয়ার দাবি করেছিল। কিন্তু বৈঠকে কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য ওপেন রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সিলেটের একজন নেতা জানান, জামায়াতের মেয়র প্রার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, সব সিটিতেই ধানের শীষ ও নৌকার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের সাধারণ কর্মী-সমর্থরাও ধানের শীষে ভোট দেবেন।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারলে সিলেটে জামায়াত ছাড়াই ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী জয়লাভ করবে বলে মত দেন বৈঠকে উপস্থিত সব নেতা। তারা বলেন, খুলনায় ভোট কারচুপি হলেও সেখানে গণমাধ্যম ও দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কারণে কিছুটা হলেও সরকারের মুখোশ উন্মোচন করা গেছে। কিন্তু গাজীপুরে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হওয়ায় সেখানকার সিটি নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে তা আমরা উন্মোচন করতে পারিনি। সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহীতে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি শক্তিশালী- এ অবস্থায় সরকারের নানা নির্যাতনের মাঝেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে পারলে গাজীপুরের মতো হতাশ হব না। বৈঠকে নেতারা আরও বলেছেন, কেন্দ্রীয় যেসব নেতা প্রচারের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় যাবেন, তারা নিজ নিজ ব্যয় বহন করবেন। অঙ্গসংগঠনের নেতারা যেন বেশি নেতা নিয়ে সেখানে না যান।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি করার স্পেস দিচ্ছে না, তাই আমাদেরকে এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে হবে। এটাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়া বৈঠকে তিন সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে তিন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।