এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলেও বিশ্বকাপটা জিতেছে কিন্তু আসলে স্বাগতিক রাশিয়াই। আরও স্পষ্ট করে বললে বিশ্বকাপ জিতেছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন! কূটনেতিক জয় হয়েছে তার।
বিশ্বকাপে শেষ আট থেকেই বিদায় নিয়েছে রাশিয়া। তাহলে রাশিয়া কীভাবে বিশ্বকাপ জিতল? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই পারে। হ্যাঁ, রাশিয়া বিদায় নিয়েছে ঠিকই তবে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া বাকি ৩১টি দেশের সঙ্গে এক মাসেই বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে দেশটির। এটিই তো চেয়েছিলেন পুতিন।
২০১৮ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য সবার কাছ থেকেই প্রশংসা কুড়িয়েছে রাশিয়া। আয়োজনের কোথাও কোনো কমতি নেই, বিদেশি দর্শকদের জন্যও ছিল কড়া নিরাপত্তা। বেশি খুঁতখুঁতে মেজাজের না হলে কারও পক্ষে রাশিয়ানদের আয়োজনের কোনো ত্রুটি ধরা সম্ভব না। বিষয়টা অবাক করেছে ইংল্যান্ড বংশোদ্ভূত রাশিয়ান সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গকেও, ‘আমি বিশ বছরের বেশি সময় ধরে মস্কোতে আছি। এত দিনে আমি কখনোই আগে রাশিয়ার শহরগুলোকে এমন দেখিনি।’
জমকালো স্টেডিয়াম, স্টেডিয়ামে বিনা মূল্যে ট্রেনযাত্রার ব্যবস্থা, সমর্থকদের মধ্যেও কোনো দাঙ্গা দেখা যায়নি। রাশিয়া এখন যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। শুধু বিদেশি পর্যটকদেরই নয় খেলোয়াড়দেরও মন কেড়েছেন পুতিন। সাবেক জার্মান মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথাউস জানান, ‘গত চল্লিশ বছরে যত আমি যতগুলো বিশ্বকাপ দেখেছি তাঁর মধ্যে সবচেয়ে সেরা বিশ্বকাপ ছিল এটি। ধন্যবাদ রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট, ধন্যবাদ রাশিয়া’।
বিশ্বকাপের একদম আগ মুহূর্তে ব্রিটেনের সঙ্গে ভালো ঝামেলা চলছিল রাশিয়ার। সে ঝামেলার রেশ এখনো আছে তবে তীব্রতা অনেকটাই কমে গেছে। শুরুতে তো এমনও বলা হচ্ছিল ইংল্যান্ড রাশিয়ায় বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না। শেষমেশ ইংল্যান্ড গেলেও ব্রিটেনের কোনো কর্মকর্তাকেই রাশিয়ায় পা রাখতে দেয়নি ব্রিটিশ দেশগুলো। রাশিয়াকে নিয়ে এমন ধারণার কোনো কারণ খুঁজে পান না রাশিয়ান রাজনীতিবিদ কনস্টানটিন কোসাচেভ, ‘রাশিয়া সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছিল যুক্তরাজ্য। কিন্তু তারা শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। আমরা খুব খুশি অন্যান্য দেশের মানুষজন বিবিসির মতো চ্যানেল দেখে বিভ্রান্ত হননি, বরং তাঁরা রাশিয়াকে নিজের চোখে দেখেছেন।’
একেবারে ভুল বলেননি কনস্টানটিন। কর্মকর্তারা রাশিয়ায় না এলেও খেলা দেখতে ঠিকই রাশিয়া গিয়েছেন অনেক ইংলিশ সমর্থক। তেমনই একজন সমর্থক ড্যারেন। ইংল্যান্ডের খেলা দেখতে রাশিয়ায় আসা এই পর্যটক বলেন, ‘আমি আতিথেয়তার জন্য রাশিয়াকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ব্রিটিশ সরকার রাশিয়া সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা দিয়েছে তা পুরোপুরিই মিথ্যা। পুতিন এ ব্যাপারে বেশ ভালো মনোযোগী ছিল। বিশ্বকাপ তিনি খুব ভালোভাবে সামলেছেন।’ রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট বিদেশি ফুটবল প্রেমিকদের মনে বেশ ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্বকাপের সুবাদেই সৌদি আরব থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গেও এখন সুসম্পর্ক রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। কূটনীতিক সম্পর্কটা যে এই বিশ্বকাপের জেরেই অনেকটা মসৃণ হয়েছে তা না বললেও চলে। বিশ্বকাপটা জিতল আসলে রাশিয়াই।