এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং যানজট নিরসনে নিজের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সমগ্র ঢাকাকে ঘিরে একটি এলিভেটেড রিং রোড নির্মাণ করা হবে। যানবাহন শুধু রাস্তা দিয়ে নয়, উপর দিয়েও চলবে- এভাবে একটি এলিভেটেড রিং রোড আমরা নির্মাণ করে মানুষের যোগাযোগটা আরও সহজ করে দেব।’ শনিবার রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডা-প্রগতি সরণি এলাকায় হাতিরঝিল প্রকল্পের নর্থ ইউ-লুপ উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজে হাতে দিয়েছি। ইতিমধ্যে বিজয় সরনি ফ্লাইওভার, জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি। দুই স্তরবিশিষ্ট মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেস রেলওয়ে নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। ঢাকা সার্কুলার রুট এবং ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণেরও কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।’
ইউ-লুপটি উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর এটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের (রাজউক) পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এটি নির্মাণ করে। ৫৫৮ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ইউ-লুপটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্লাহ এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু সাইদ মোহাম্মদ মাসুদ অনুষ্ঠানে ইউ-লুপ প্রকল্পটির ওপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম ৮ লেন মহাসড়ক চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। যেটা শিগগিরই ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। ঢাকা-সিলেট রোডও ছয় লেন করা হবে।’
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। অবশিষ্ট অংশ ২০২০ সালের মধ্যে চালু হবে ইনশাআল্লাহ।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘গাজীপুর-বিমানবন্দর বাস র্যাপিড ট্রানজিটের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৪০ কিমি. পাতাল রেল এবং পূর্বাচল থেকে কুড়িল পর্যন্ত ১০ দশমিক ২০ কিমি. মেট্রোরেল বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেল এখন মাটির নিচ দিয়েও যাবে আবার উপর দিয়ে যাবে। দু’দিকেই আমরা করছি।’ তিনি বলেন, ‘হেমায়েতপুর হতে গাবতলী, মিরপুর, গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৬০ কিমি. এমআরটি লাইন-৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এ লাইনেও শহর এলাকায় ১৩ দশমিক ৬০ কিমি. পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে।’
বাস্তবায়নকৃত হাতিরঝিল প্রকল্প রাজধানীর যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তায়নের ফলে এ এলাকা বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং এ বিষাক্ত পরিবেশকে সবুজের সমারোহ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে গড়ে তোলা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকাকে ঘিরে যেমন রিং রোড করব পাশাপাশি ঢাকার আশপাশে ছোট ছোট শহর গড়ে তুলব। যে শহরগুলো হবে বহুতল ভবনবিশিষ্ট। আর ওসব ভবনে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এছাড়া রাজধানী ও সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে হাইস্পিড ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি তার সরকার রেল যোগাযোগ বৃদ্ধিতেও সমান গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে যাতে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায় সে জন্য আমরা বুলেট ট্রেন (দ্রুতগামী ট্রেন) চালু করব। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা থেকে সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, বরিশাল একেবারে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এবং ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত এই ট্রেন চালু করা হবে, যার ভেতর খুলনাও কভার হবে।
শেখ হাসিনা বলেন. ঢাকায় আর বেশি মানুষকে বসবাস করতে হবে না, দিনে দিনে কাজ সেরে যে যার গন্তব্যে যেন ফিরে যেতে পারেন সেই লক্ষ্য থেকেই এ পরিকল্পনা প্রণয়ন।
ঢাকার নৌযোগাযোগকে সম্প্রসারণে তার সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা যেই চারটি নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত সেই নদীগুলোকে ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। ছোট ছোট ব্রিজগুলো পুনর্নির্মাণ করে নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে।
তিনি বলেন, সেই সঙ্গে রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করে হাতির ঝিলের এ খাল এবং গুলশান, বনানীর খালগুলোর সঙ্গে সংযোগ খাল খনন করে নদীর সঙ্গে সংযোগ করে দেয়া হবে। যাতে এসব খালের পানি প্রবাহটা ভালো থাকে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় খাল বন্ধ করে বক্স-কালভার্ট করার কারণেও রাজধানীতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ উল্লেখ করে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারলে এসব কালভার্ট বন্ধ করে সেখানে খাল করে ওপরে এলিভেটেড রাস্তা করে দেয়াও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
সড়ক, নৌ, রেলপথের পাশাপাশি আকাশ পথের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সৈয়দপুর বিমান বন্দরকে উন্নত করে আঞ্চলিক বিমান বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যাতে করে আমাদের সীমান্তবর্তী ভারতের ৭টি প্রদেশ এবং নেপাল ও ভুটান যেন এ বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব। রাজশাহী এবং বরিশাল বিমান বন্দরকেও আমরা উন্নত করব। আর কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করা হবে সব থেকে দৃষ্টিনন্দন বিমান বন্দর। যেখানে বড় বড় বিমান অবতরণ করতে পারবে।
তিনি বলেন, এক কথায় বাংলাদেশটাকে সুইজারল্যান্ড অব দ্য ইস্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। শেখ হাসিনা এ সময় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই আমরা তাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। একটানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আছি বলেই উন্নয়নের কাজগুলো করতে পেরেছি। আর আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যেন দেশটা আরও উন্নত-সমৃদ্ধ হয়। তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিলে কেউ বঞ্চিত হয় না।