এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন- এ দুই ইস্যুতে আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করছে বিএনপি। তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই এ রোডম্যাপ চূড়ান্ত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির টার্গেট অক্টোবর। দাবি আদায়ে এ মাসেই কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে তারা রাজপথে থাকবেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে রাজপথে নামবে দলটি।
ওই দিনই বৃহত্তর জোট গঠনের প্রাথমিক রূপরেখার ঘোষণা হতে পারে। আন্দোলনে যারা মাঠে থাকবে না তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না- হাইকমান্ডের এমন কঠোর মনোভাব নেতাদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী এক মাস সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী করার কাজ চলবে। সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত গঠন করা হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ঢাকা মহানগরকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিএনপির নীতিনির্ধারক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এদিনের কর্মসূচির মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। ওই সমাবেশে ঐক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন- এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন এক নীতিনির্ধারক।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের ৭৮ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মতামত পর্যালোচনা করতে আট আগস্ট বুধবার বৈঠক করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সাংগঠনিক জেলার ১৬০ নেতার বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে প্রায় সব নেতার বক্তব্যেই ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না এবং আন্দোলনের বিকল্প নেই’- এমন মত উঠে এসেছে।
এ ছাড়া চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে দলকে আরও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেন সব নেতা। তৃণমূল নেতাদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একমত পোষণ করেছেন নীতিনির্ধারকরা। তবে আন্দোলনের ধরন কী হবে তা নিয়ে জেলার নেতাদের পরামর্শের বিষয়ে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গত ৩ ও ৪ আগস্ট সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানে দুই দিনব্যাপী বৈঠক করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের তৃণমূল নেতারা তাদের মতামত দিয়েছেন। আমরা তাদের মতকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই বলছি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
সূত্র জানায়, সাত আগস্ট গুলশান কার্যালয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকেও তৃণমূলের মতামত অবহিত করেন বিএনপি নেতারা। ওই বৈঠকে কূটনীতিকরা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে মির্জা ফখরুল তাদের বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত।
এ অবস্থায় নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে তারা কীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা ছাড়া এবং বর্তমান সংসদকে বহাল রেখে আর সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া দলের তৃণমূল নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। সূত্রমতে, তৃণমূল নেতাদের মতামত বুধবারের বৈঠকে সারাংশ করেছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। শিগগির এ নিয়ে আরেকটি বৈঠক করার কথা রয়েছে ।
ওই বৈঠকেই মূলত চূড়ান্ত আন্দোলন ও বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়া- এ দুই ইস্যুতে স্থায়ী কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পরে এ ব্যাপারে দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করা হবে। দলের এ দুই শীর্ষ নেতা একমত হলেই আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবশ্যই কী ধরনের আন্দোলন, তা বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে স্থায়ী কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কোনো হঠকারী কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করার কথা বলে গিয়েছিলেন। দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের সাংগঠনিক জেলার প্রায় সব নেতাই খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলে মত দেন। একই সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও জানান তারা। বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, তৃণমূলের বৈঠকে বিভিন্ন জেলার নেতারা একই সুরে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে গেলে তা হবে দলের জন্য আত্মঘাতী। যে সব মামলায় তাকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে তা মিথ্যা মামলা।
এসব মামলায় খালেদা জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সুতরাং তাকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে গেলে এসব মামলার বৈধতা দেয়া হবে। আমরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি পেলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া বলেন, তৃণমূলের বৈঠকে বলেছি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কোনো নির্বাচন বাংলার মাটিতে হবে না। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ জন্য আগামী দিনে যে কর্মসূচি দেয়া হবে তা সফল করতে আমরা প্রস্তুত আছি।
এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দলের তৃণমূলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকেও সবাই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। তফসিল ঘোষণার আগেই তারা দাবি আদায় করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।