এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে বাণিজ্য করার পরিকল্পনায় ভারত এই প্রথমবারের মতো চীনকে ‘সীমিত বিনিয়োগ’ দিয়ে যুক্ত করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। ভারতের লক্ষ্য হলো চীনের সঙ্গে তাদের ৫১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিকে হ্রাস করা। এতে বলা হয়েছে, চীন যেন উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যবসা করার কথা না ভাবে। ভারত সরকার নর্থ ইস্টকে শুধু ট্রেড হাব হিসেবে গড়ে তুলবে। সবাই এখান থেকে পণ্য আনা-নেয়া করবে, কিন্তু বাজার বানাতে চাইবে না। আপনি গুয়াহাটিতে মার্কেট তৈরি করতে পারেন, যেখান থেকে সমগ্র বাংলাদেশের বাজারে আপনি প্রবেশ করতে পারেন।
বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ইন্ডিয়া (বিবিআইএন) একটি আঞ্চলিক হাব হবে। আর তখন চীনকে বলা হবে তোমরা এবারে উত্তর-পূর্ব ভারতকে ব্যবহার করো। চীনা সীমান্ত থেকে মালামাল এনে তোমরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাঠিয়ে ভারত মহাসাগরকে ব্যবহার করো।
বেইজিং থেকে পিটিআই ১৫ই আগস্ট খবর দিয়েছে, ভারত প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে সীমিত চীনা বিনিয়োগ আশা করছে। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলীয় চীনা শহর গুয়াংজু সফররত আসাম, ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডের সিনিয়র মন্ত্রীদের একটি দল ওই পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। ওই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব।
পিটিআই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের সাংবাদিকরা বেইজিংয়ে জানতে চান, আপনি যে পরিকল্পনার কথা বলছেন, তাতে বাংলাদেশের সায় আছে কিনা, উত্তরে রাম মাধব বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেশের মধ্য দিয়ে রেল, রোড ও পানিপথে কানেকটিভিটির কথা বলেছেন।
রাম মাধব বেইজিংয়ে ভারতীয় মিডিয়াকে বলেছেন, রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা ভারতীয়দের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এতদিন উত্তর-পূর্ব ভারতকে কীভাবে চীন কাজে লাগাতে পারে তা ভাবিনি। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আমাদের ভিশন হলো দক্ষিণ-পশ্চিম চীন নর্থইস্টকে ব্যবহার করতে পারে। চীনা ব্যবসায়ীরা তখন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারত মহাসাগরে পড়বে। আমরা এতদিন ভেবেছি যে, শুধু সিকিম দিয়ে চীনা পণ্য ঢুকিয়ে কলকাতা বন্দর পথে তা ভারত মহাসাগরে যেতে দেব। কিন্তু এখন দেখছি, চট্টগ্রাম বন্দর একটি চমৎকার সুযোগ।’
উল্লেখ্য, ভারতের পক্ষ থেকে এধরনের কোনো বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে ইতিহাসে আর কোনো ভারতীয় রাজনীতিক মন্তব্য করেছেন বলে জানা যায় না। তবে রাম মাধব সেই পুরনো সমস্যার উল্লেখ করতে এবারেও ভুলেননি। বেইজিংয়ে তিনি একথাও স্বীকার করেন যে, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে চীন এখনো পর্যন্ত অরুণাচল প্রদেশকে তিব্বতের অংশ হিসেবে গণ্য করে। অরুণাচল প্রদেশে কিছু বিষয় রয়েছে যা একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
রাম মাধবের কথায়, ‘এরপর আমরা ইবাইক উৎপাদনকারী এবং কিছু সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ফার্ম-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। চীনা ব্যবসায়ীরা আগ্রহের সঙ্গে তিন রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এমনকি তারা আসাম সফরে যাবেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
বিজিপি সাধারণ সম্পাদক মাধব চীনাদের কাছে এটা পরিষ্কার করেছেন, ভারতীয় পণ্য চেন্নাই বা মুম্বই হয়ে চীনে পাঠাতে কত বেশি খরচ পড়বে আর একই পণ্য যদি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পাঠানো যায়, তাহলে খরচ কত বেশি কম পড়বে।
মাধব বলেন, আমরা সবক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগ ঢুকতে দেব না। যেখানে সম্ভব সেখানে দেব। উত্তর-পূর্ব ভারত সরকারের কাছে একটি বিশেষ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিক এলাকা। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে ৯০ কিলোমিটার দূরবর্তী ত্রিপুরাকে যুক্ত করছি। আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত সমুদ্র পথে ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়বে। ‘‘বর্তমানে পণ্য মুম্বই ও চেন্নাই থেকে রেল বা সড়ক পথে কলকাতা হয়ে গুয়াহাটিতে নিতে হচ্ছে। আমরা যদি চট্টগ্রাম বন্দরকে যুক্ত করতে দেই তাহলে সেটা হবে একটি চমৎকার কানেকটিভিটি। কারণ এই পথে উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার এবং তিব্বত হয়ে চীনকে যুক্ত করতে পারবে।