এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিশ্বের কয়েকটি হ্যাকিংয়ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উত্তর কোরিয়ার এক হ্যাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই প্রোগ্রামার পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষেই হ্যাকিং করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। ওই হ্যাকারের নাম পার্ক জিন হিয়ক। বৃহস্পতিবার অভিযোগ গঠনের পাশাপাশি পার্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
মার্কিন জাস্টিস অ্যান্ড ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বলছে, পার্ক জিন হিউক একটি হ্যাকার দলের সদস্য। এরা ‘ল্যাজারাস গ্রুপ’ নামে পরিচিত। পার্ক জিন অনেক হ্যাকিং ঘটনার মূল হোতা। ২০১৪ সালে সনি করপোরেশনে সাইবার হামলার পেছনেও ছিলেন এ হ্যাকার গ্রুপ। সেখান থেকে তারা অনেক তথ্য চুরি করে। অনেক তথ্য নষ্ট করে ফেলে। পার্ক উত্তর কোরিয়া সরকার এবং দেশটির ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে বড় বড় হ্যাকিংগুলো করতেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাইবার হামলার পেছনেও ছিল এই একই চক্র।
যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে, পার্ক জিন হিয়ক একটি বড় হ্যাকার চক্রের সঙ্গে কাজ করত। ২০১৭ সালে ‘ওয়ানাক্রাই ২.০’ ভাইরাস নামে বিশ্বজুড়ে যে সাইবার হামলা হয়েছিল তার সঙ্গে এই হ্যাকার জড়িত ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির একটি প্রতিরক্ষা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন করপোরেশনকে তারা লক্ষ্য করেছিল। কিন্তু সফল হতে পারে নি। চীনা কোম্পানি ‘চুসান এক্সপো’র আড়ালে ‘ল্যাজারাস’ হ্যাকার গ্রুপটি কাজ করত। এদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ‘চুসান এক্সপো’র কোম্পানিটি উত্তর কোরিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ল্যাব ১১০ এর সঙ্গে কাজ করে বলেও অভিযোগ মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের।
১৭৬ পাতার অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই ‘ল্যাজারাস গ্রুপ’ ও এর সদস্যরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশেই ম্যালওয়্যার আক্রমণ, হ্যাকিং করে অর্থ হাতানো এবং নথি চুরি করত। এসব আক্রমণ হতো উত্তর কোরিয়া, চীন এবং অন্য সব দেশ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা হ্যাকিং ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা ও হ্যাকিং ঘটনাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তা পল ডেলাকোর্ট বলেন, উত্তর কোরিয়া সরকার তাদের স্বার্থ হাসিলে কীভাবে হ্যাকিং করত অভিযোগপত্রে তা বলা হয়েছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাইবার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। সাইবার অপরাধীরা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের নেটওয়ার্ক সুইফটে (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) ভুয়া অনুরোধ পাঠিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। চুরি যাওয়া ওই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। আর ফিলিপাইনে চলে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের সিংহভাগেরই কোনো হদিস মেলেনি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অংশের দেড় কোটি ডলার নগদে ফেরত দেয় ফিলিপাইন। বাকি ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার উদ্ধার বা ফেরত পাওয়া নিয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। অর্থ চুরির মূল ঘটনাটি ৫ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। তথ্যসূত্র: এএফপি