এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে আঘাত হানা ঝড় ফ্লোরেন্সের কারণে নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনার একাংশ ও ভার্জিনিয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
শক্তি হারিয়ে ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হওয়া ফ্লোরেন্স এখনও উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ঝরাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ঝড়টি এর মধ্যেই অসংখ্য গাছ উপড়ে ফেলেছে, ধ্বংস করে দিয়েছে হাজারও বাড়িঘর।
ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার বেগের বাতাস নিয়ে ফ্লোরেন্স এখন অতি ধীরে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ঝড়ের কারণে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার উইলমিংটনে ঘরের ওপর গাছ পড়ে শিশুসহ এক মা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। একই ঘটনায় শিশুটির বাবাও গুরুতর আহত হয়েছেন, তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
লেনয়ের কাউন্টিতে ৭০ এর বেশি বয়সী দুই বৃদ্ধ মারা গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এদের একজন বৈদ্যুতিক জেনারেটরের সংযোগ চালু করতে গিয়ে মারা পড়েন; পোষা কুকুর ঠিক আছে কিনা দেখতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাতাসের ধাক্কায় নিহত হন অপরজন।
হ্যাম্পস্টিডের এক নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খবর দিলেও সড়কে পড়ে থাকা গাছের কারণে জরুরি বিভাগের কর্মীরা সেখানে সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি, বলেছেন শহরটির এক কর্মকর্তা।
ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে বাড়িঘর থেকে সরে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ এখনও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেই অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে এক মাত্রার শক্তি নিয়ে হারিকেন ফ্লোরেন্স নর্থ ক্যারোলাইনার রিটসভিল সমুদ্রসৈকতে আঘাত হানে।
“নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনার একাংশে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা আছে,” শুক্রবার পরের দিকে দেওয়া বার্তায় বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার।
ঝড়ের কারণে নর্থ ক্যারোলাইনার কিছু কিছু অংশে ঢেউ ১০ ফুট পর্যন্ত উঠেছিল, জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
ফ্লোরেন্সের তাণ্ডব কয়েকদিন ধরে চলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর রয় কুপার। ঝড়টিকে ‘হাজার বছরের মধ্যে মনে রাখার মতো ঘটনা’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি।
টুইটারে আবহাওয়াবিদ রায়ান মাউই বলেছেন, ফ্লোরেন্স যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ১৮ ট্রিলিয়ন গ্যালন বৃষ্টির পানি ঝরাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নর্থ ক্যারোলাইনার ৮ লাখ মানুষ এখনই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করছেন বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংযোগ পুনঃস্থাপনে কয়েকদিন, এমনকী সপ্তাহখানেকও লেগে যেতে পারে, আশঙ্কা তাদের।
ফ্লোরেন্সের গতিপথে থাকা বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নর্থ ক্যারোলাইনার জ্যাকসনভিলের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ের মধ্যেই একটি হোটেলের ভেতরে আটকে পড়া ৬০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছে বলেও জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।
নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ৩০ হাজার বাসিন্দার শহর নিউ বের্ন শুক্রবারই ১০ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। অবশ্য তার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
আটকে পড়াদের মধ্যে শহরটির চারপাশে নৌকায় ঘুরে বাসিন্দাদের উদ্ধারে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজুন নেভির একদল সদস্যও আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকদিনের মধ্যেই দুর্গত এলাকাগুলো পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
প্রেসিডেন্টের ভ্রমণের কারণে উদ্ধার তৎপরতা যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করেই পরিদর্শনের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে, বলেছে তারা।