এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভেনিজুয়েলা। দেশজুড়ে শুধু নেই আর নেই। আয়-রোজগার নেই জনগণের। খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাওয়াগুলো পূরণ করতেও হিমশিম খাচ্ছে।
হাসপাতালে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়েও মিলছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।
এই চরম পরিস্থিতির মুখে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার আশায় দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালাচ্ছে নাগরিকরা। দেশের এ বেহাল দশা ঘুচাতে একটু সাহায্যের আশায় অন্যের কাছে হাত পাততেও লজ্জাবোধ করছেন না দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
‘ঘর-সংসার’ বাঁচাতে তাই শেষপর্যন্ত ‘বড় বোন’ চীনের দরজায় দাঁড়ালেন তিনি।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে ১১তম বারের মতো বেইজিং সফর করছেন মাদুরো। তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার তিনি বেইজিং পৌঁছান। শুক্রবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার কারাকাসে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনকে তিনি ‘বড় বোন’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের বড় বোন। আমাদের বড় ভাই শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি আমি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ছোট ভাইয়ের মতোই বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান মাদুরো। এর আগে ২০১৭ সালে ১০ম বারের মতো চীন সফর করেন তিনি।
ভেনিজুয়েলা এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের পুজিবাদী ব্লক এবং চীন-রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ব্লকের প্রভাবমুক্ত ছিল। বিপরীতে কিউবা, বলিভিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার সমমনা অন্য দেশগুলোকে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছিল দেশটি।
রাজনৈতিক ও অর্থনেতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ক্রমেই সেই অবস্থান থেকে চীনের দিকে ঝুঁকছে কারাকাস। বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তার ‘বড় ভাই’ প্রেসিডেন্ট জিনপিং। চীনের সঙ্গে ভেনিজুয়েলার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাদুরোর গুরুত্বারোপের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, চীন বরাবরই কৌশল ও দীর্ঘমেয়াদে ভেনিজুয়েলার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে আসছে। বর্তমান বিশ্বে অনিশ্চয়তা এবং নতুন পরিস্থিতিতে চীন ও ভেনিজুয়েলার উচিত রাজনৈতিক আস্থা ও সহযোগিতা জোরদার করা এবং নতুন অর্থনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে উন্নতি অর্জন করা।
মাদুরো বলেছেন, ভেনিজুয়েলা ও চীনের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘকালীন মৈত্রী। দু’দেশের সম্পর্ক নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠেছে। ভেনিজুয়েলা-চীন সহযোগিতা আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের জন্য সহায়ক বলে মন্তব্য করেন মাদুরো।
এএফপি জানিয়েছে, ওপেকের সদস্য হিসেবে গত এক দশকে ‘ছোট বোন’ ভেনিজুয়েলাকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে চীন। বিনিময়ে তেল দিয়ে ঋণ শোধ করছে কারাকাস। এ সফরে নতুন করে আরও ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন মাদুরো।