এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বহুদিন ধরেই সোচ্চার মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। সম্প্রতি গড়ে ওঠা জোট ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ও একই দাবি জানিয়েছে।
সরকারের বাইরে থাকা অধিকাংশ দলের সমন্বয় ও সমর্থনে যাত্রা শুরু করা ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ দাবিটি পূরণে সরকারকে সময়ও বেঁধে দিয়েছে। তবে সরকারি দল বরাবরই বলে আসছে সংবিধানের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা- তবে কী আবারও সংঘাতময় পরিস্থিতি ফিরে আসছে।
এ নিয়ে কথা হল বিশিষ্টজনদের সঙ্গে। তারা বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে আলোচনায় বসা। নিজেদের অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে আলোচনায় বসলেই সমাধান বেরিয়ে আসবে।
যেভাবেই হোক ঐক্যে আসতে হবে-এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হওয়া উচিত। সংকট নিরসনে যেভাবেই হোক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা ঐক্য তৈরি হতে হবে।
আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, সংসদ ভাঙা হবে কিনা, নাকি নতুন কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করা হবে- বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এসব বিষয়ে একটি সমাধানে আসতে হবে।
আজিজুল ইসলাম বলেন, সংকটের সমাধান না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে বিনিয়োগে মন্দা আরও বাড়বে। এমনিতেই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। অনেক দিন ধরে এটা স্থবির হয়ে আছে।
বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি নিরুৎসাহিত হবে। সেটা কারও কাম্য নয়। কারণ আমাদের দেশ এখনও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চাইলে অবশ্যই বিনিয়োগ লাগবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে এ সুফল পাওয়া যাবে না। তাই দেশের স্বার্থেই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হওয়া উচিত।
সংবিধান অনুযায়ীই সবকিছু হবে -ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ : সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানে যা আছে সে অনুযায়ীই সবকিছু হবে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই সংবিধানে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। কিন্তু আদালত সেটা বাতিল করেছে।
এখন সংবিধান পরিবর্তন করে নির্দলীয় সরকার যুক্ত করা হলে তা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যাবে। এটা সম্ভব নয়। আর নির্বাচন তো সরকার করে না। নির্বাচন করে নির্বাচন কমিশন। সরকার তাদের চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা করে থাকে।
তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলেছেন। বিএনপিসহ সব দলের মতামত নিয়েই ইসি পুনর্গঠন করা হয়েছে। আর ইচ্ছা করলেই তো সেটা পুনর্গঠন করা যায় না। কারণ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক বডি। তাদের এ ধরনের দাবি মানার সঙ্গত কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
ব্যারিস্টার শফিক বলেন, যারা সংঘবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন তারা যদি অসাংবিধানিক কথা বলেন যা মানা সম্ভব নয় তাহলে বুঝতে হবে তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। তারা একটি অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
দু’পক্ষেরই উচিত আলোচনায় বসা -সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সংকট নিরসনে আমি সব সময় আলোচনার কথা বলে আসছি। আলোচনা হতে পারে। জাতীয় ঐক্য যারা করেছেন তাদের উচিত হবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা। সরকারেরও উচিত আলোচনায় বসা। কারণ আলোচনার বিকল্প কিছু নেই। অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য মানের নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে।
ড. হোসেন বলেন, সরকার হঠানো বা সরকারকে নতুন করে দাবি মানানো সম্ভব নয়। কারণ গত দশ বছরে দশ মিনিটও তারা আন্দোলন করতে পারেনি। আর দুই মাসে এই আন্দোলন করতে পারবে বলে মনে হয় না। যারা ঐক্য করেছেন তাদের রাজনৈতিক শক্তিমত্তা প্রদর্শনের শক্তি আছে বলে আমার মনে হয় না।
আলোচনায় না বসলে কি আবারও সেই সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে? এ অধ্যাপক বলেন, ওই সময় (২০১৪) যে সংঘাত হয়েছিল, এবার সেটা হওয়ার শঙ্কা কম।
বৃহত্তর ঐক্যের ব্যাপারে ড. হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্য নয়, এটা আওয়ামী বিরোধী ঐক্য। উপরন্তু এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় যারা সম্পৃক্ত তাদের কোনো পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করার ক্ষমতা নেই। বিএনপিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য করেছেন। বিএনপি একা নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছিল, তার সঙ্গে কামাল হোসেন যুক্ত হয়েছেন। ড. কামাল হোসেন কেন বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে গেলেন এটা আমার জানতে ইচ্ছা হয়।
গণতন্ত্রের অর্থই হল আলাপ আলোচনা -ড. শাহদীন মালিক : বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে তা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলকর হবে না। আর গণতন্ত্রের অর্থই হল আলাপ-আলোচনা। গণতন্ত্রের কথা বলে কোনো আলাপ-আলোচনা হবে না এটা তো হতে পারে না।
আলোচনায় না বসলে কী হবে? জবাবে শাহদীন মালিক বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে আমি মনে করি, যারা আলাপ-আলোচনা করে না বা সংলাপে বসে না তারা আমার দৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক হতে পারে না। বর্তমান বিশ্বে যেসব দেশে হানাহানি বিরাজ করছে, সশস্ত্র সংঘাত আছে, তার মূলে রয়েছে সংলাপ না হওয়া। আমাদের এখানে হানাহানি হবে এটা আমি বলছি না। আমি বলছি যে, সংলাপ না হলে হানাহানির শঙ্কা সব সময় বেড়ে যায়।