এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছেন বিরোধী জোটের প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ। সোমবার বিবিসি জানায়, বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে পরাজিত করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন মালদ্বীভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) প্রার্থী সোলিহ।
তিনি ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রোগেসিভ পার্টির প্রার্থী আবদুল্লাহ ইয়ামিন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ১৩২ ভোট। ইয়ামিনের বিরুদ্ধে দ্বীপপুঞ্জে বিরোধী মত দমনের অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে পুকুরচুরি করবেন বলেও শঙ্কা ছিল। পরাজয়ের পর ইয়ামিন ভোট মেনে নেবেন কিনা তা নিয়েও নতুন সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলাচল কাটিয়ে নির্বাচনে নিজের পরাজয় মেনে নিয়েছেন ইয়ামিন।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির রোববারের নির্বাচনে কড়া নজর রেখেছিল এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীন। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিরোধী প্রার্থী সোলিহের ঝোঁক ভারত ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর দিকে। অবশেষে চীনাপন্থী প্রার্থীর পরাজয় হল। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এ ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। জয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সোলিহের সমর্থকেরা জয় উদযাপনে রাস্তায় নেমে আসেন। সারারাত রাস্তায় উল্লাসে মাতেন তারা। হলুদ রঙা পতাকা নিয়ে রাস্তায় নেচে-গেয়ে উল্লাস করেন।
সোলিহ প্রেসিডেন্ট ইয়েমেনকে ‘জনরায় মেনে নেয়ার’ আহ্বান জানান। ইবু নামে জনপ্রিয় সোলিহ। রাজধানী মালেতে তিনি বলেন, ‘সুখের মুহূর্ত এটি, আশার মুহূর্ত। ব্যালট বাক্সে জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বার্তা এখন পরিষ্কার। মালদ্বীপের জনগণ পরিবর্তন, শান্তি ও ন্যায়বিচার চায়।’
পরে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরাজয় মেনে নেয়ার কথা জানান ইয়ামিন। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপের জনগণ যা চায় সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটের ফলাফল মেনে নিয়েছি আমি। আজ (সোমবার) সকালে ইব্রাহিম সোলিহর সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে মালদ্বীপের ভোটাররা তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে। আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।’
নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন আরেক মেয়াদে জয় পাবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। তার প্রতিপক্ষের অনেকে এখন কারাগারে। ভোটের আগে দেশটির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেছিলেন, ইয়ামিনের পক্ষে ভোটে কারচুপি হবে। সৎভাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমকেও জেলে ঢুকিয়েছেন ইয়ামিন। দেশটির আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদকে মামলার জালে ফাঁসিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখেন ইয়ামিন। ২০১২ সালে নাশিদকে উৎখাত করেন তিনি। এতে এক রকম ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু জনরায় ইয়ামিনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে।
সোলিহ মালদ্বীপের অন্যতম প্রবীণ রাজনীতিক। দেশটিতে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য তিনি বছরের পর বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এবার নির্বাচনে তিনি বিরোধী জোট থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হন। তার জোটে রয়েছে এমডিপি, জুমহরি পার্টি ও আদহালাথ পার্টি। ২০১১ সাল থেকে এমডিপির হয়ে তিনি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। মোহাম্মদ নাশিদ টুইটারে সোলিহকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মালদ্বীপের জনগণের জন্য ‘তিনি খুবই ভালো কাজ করেছেন’।
দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। ফেব্র“য়ারি মাসে সুপ্রিমকোর্ট নাশিদসহ নয় বিরোধী নেতাকে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। এরপর পরই প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ছোট্ট এ দ্বীপরাষ্ট্রে অনেকে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। নাশিদও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সোলিহও ভারতপন্থী। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সঙ্গে চীনা ঘনিষ্ঠতা সুনজরে দেখেনি ভারত। ইয়ামিনের শাসনামলে মালদ্বীপ তাদের বড় প্রকল্পগুলোতে চীনের অর্থায়নকে স্বাগত জানায় এবং দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে। বিশ্লেষকদের মতে, স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে- এই ভয় থেকে মালদ্বীপে সরকার পরিবর্তন হোক তা চায়নি চীন।