এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : দুর্নীতিবাজরা জোট করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, খুনি, অর্থ পাচারকারী এবং সুদখোররা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে, এরা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে ফেলবে। এরা দেশের সম্পদ লুটে খেয়েছে, এরা ক্ষমতায় গেলে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে মিলে দেশ ধ্বংস করবে। কাজেই জনগণকে তাদের সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রে তার সম্মানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সরকারবিরোধী জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে তারা কিভাবে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন?
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তারা যে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তা আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং মাহমুদুর রহমান মান্না এই দুর্নীতিবাজদেরই সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়েন না। দরিদ্রদের উচ্চসুদে ঋণ দিয়ে তিনি এখন বড়লোক হয়েছেন।
হিলারি ক্লিনটনের সহযোগিতায় ড. ইউনূস পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে গ্রেপ্তারের পর তিনি (ইউনূস) ইয়াজউদ্দীন নেতৃত্বাধীন সরকারকে ডাবল এ প্লাস মার্ক দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এরা সব এক জায়গায়। কেউ সুদখোর, কেউ ঘুষখোর, কেউ মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত, কেউ খুনি। এভাবে সব আজকে এক জায়গায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ নতুন জোটকে সমর্থন দিয়েছেন কিন্তু অতীতে তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মইনুল হোসেন কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করেছিলেন, সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে।
সাজু হোসেন বনাম রাষ্ট্র ওই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। আর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে এক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি নিজের ভাইয়ের নামে দখল নেয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ অভিযুক্ত। কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের সরকারে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমস্ত দুর্নীতিবাজকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা লড়াই করবেন! কামাল হোসেন লড়াই করবেন? বি চৌধুরী লড়াই করবেন? মান্না লড়াই করবে? যুক্তফ্রন্ট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কেন সরকারকে উৎখাত করবে? কারণটা কী? দেশের জন্য আমরা কি করি নাই? এমন কোনো খাত নেই, যেখানে উন্নয়ন করি নাই। আরে এটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই সম্ভব।
স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মিডটাউনের হিলটন হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি এ সময় অন্যদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি: এদিকে সংবর্ধনা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে অবস্থানকালে সিদ্দিকুর রহমান সভাপতির বক্তব্য দেয়ার জন্য চেষ্টা করলেও উপস্থিত নেতাকর্মীদের বাধার কারণে তিনি আর বক্তব্য চালিয়ে যেতে পারেননি। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়া তারা বলেন, ‘নো মোর সিদ্দিক’। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় নেতারা চেষ্টা করলেও তারা নেতাকর্মীদের থামাতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্য শেষেও নেতাকর্মীরা ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
বিএনপির বিক্ষোভ: এদিকে হিলটন হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা চলাকালে বাইরে বিএনপি ও বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘গো ব্যাক হাসিনা’। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির কোনো কমিটি নেই। তবে দলটির সমর্থকদের বিভিন্ন গ্রুপ এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। এছাড়া বিমানবন্দরেও তাদের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়।