এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়াই পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছাড়া সর্বশেষ কবে জিতেছিল বাংলাদেশ?
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে একাদশ দেখে চমকে গেছেন অনেকেই। সাকিব আল হাসান নেই! এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা! একে তো তামিম ইকবাল নেই, তারপর সাকিব। আশার প্রদীপটা কী দপ করে নিভে গিয়েছিল?
নেভাটা অস্বাভাবিক নয়। ব্যাটিং অর্ডারের দুই প্রাণভোমরা ছাড়া জয়ের আশাটা তো দুঃসাহসেরই নামান্তর। মুশফিক-মোস্তাফিজরা সেই সাহসটা দেখালেন ; সাকিব-তামিম ছাড়াও যে দল এখন চাপের ম্যাচ জিততে পারে—তার অনুপম উদাহরণ সৃষ্টি করল মাশরাফির দল। ব্যাপারটা সমর্থকদের জন্য মনের ফ্রেমে গেঁথে রাখার মতো বিরল স্মৃতিও। সাকিব-তামিমকে ছাড়া শেষ কবে জিতেছে বাংলাদেশ? এই প্রশ্নের জবাব বের করা আর খড়ের গাদায় সুচ খোঁজা তো একই কথা!
সাকিবের ওয়ানডে অভিষেক ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। পরের বছর তামিমেরও এই সংস্করণে অভিষেক ঘটেছিল একই দলের বিপক্ষে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ দলের পথচলার এ দুজন বিশ্বস্ত সঙ্গী। তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিশেষ করে ব্যাটিং অর্ডারে ভুগতে হয় দলকে। আগে যেমন হয়েছে এখনো তার ব্যত্যয় হয়নি। তামিমকে ছাড়া আজকেও টপ অর্ডারে ভুগেছে বাংলাদেশ। সাকিব না থাকায় মিডল অর্ডারে মুশফিক দায়িত্ব নিয়ে না খেললে আজ টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা হয়তো সম্ভব হতো না। সেটি সম্ভব হয়েছে সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতিতেই এবং এই দুজনকে ছাড়া বাংলাদেশ ওয়ানডেতে জয়ের মুখ দেখল দীর্ঘ পাঁচ বছর পর।
গুরুত্বপূর্ণ দুজন খেলোয়াড় ছাড়া বাংলাদেশের জয়বঞ্চিত থাকার সময়টা বেশ দীর্ঘই। এই সময়ে তাঁদের ছাড়া ওয়ানডেতে জেতেনি বাংলাদেশ। আজকের আগে সর্বশেষ এমনটি ঘটেছে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর—ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে। আগের দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে সাকিব-তামিম ছাড়াই মাঠে নেমে কিউইদের ৫ উইকেটে ৩০৭ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে শামসুর রহমানের ৯৬, নাঈম ইসলামের ৬৩ ও নাসির হোসেনের অপরাজিত ৪৪* রানের সুবাদে কিউইদের ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ।
সাকিব-তামিমকে ছাড়া বাংলাদেশের প্রথম জয়ের স্মৃতিটা সেই বছরেই। মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। পরের ম্যাচটা বৃষ্টির বাগড়ায় পণ্ড হওয়ায় তৃতীয় ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য হয়ে দাঁড়ায় সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। তামিম-সাকিবকে ছাড়াই সেই ম্যাচে মাঠে নেমে ডি/এল মেথডে ৩ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। সাকিব-তামিম (তাঁদের অভিষেকের পর) ছাড়া সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। এরপর দ্বিতীয় জয়টি মিলেছে সে বছরেই। আর দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবুধাবিতে দেখা মিলল তৃতীয় জয়ের—যেখানে নেই দলের দুই প্রাণভোমরা। চোটের কারণে তাঁরা দেশে ফিরে এসেছেন। দলের এশিয়া কাপ ফাইনাল নিশ্চিত করা দেখে তাঁরা হয়তো ভাবছেন, ‘তরুণেরা একটু হলেও দায়িত্ব নিতে শিখেছে। ফাইনালে আমরা না থাকলেও চলবে!’