এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ফারমার্স ব্যাংকের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ঋণ গেছে বড় গ্রাহকের পকেটে। দেশের বিভিন্ন গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠান এ ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দিচ্ছে না। এ ধরনের ২৬টি প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৩৩৬ কোটি টাকা। তবে মোট খেরাপি ঋণ দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যা মোট ঋণের ১৯ শতাংশ। বর্তমানে এ সব প্রতিষ্ঠান মন্দমানের খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম। আরও দুই প্রতিষ্ঠান খেলাপি হওয়ার পথে। বাকি ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান ঋণের সব অর্থ ফেরত দিয়েছে। এগুলো হল- আলিফ এন্টারপ্রাইজ ৫৫ কোটি টাকা, রোহম অ্যান্ড হাস এন্টারপ্রাইজ ৫০ কোটি টাকা এবং অ্যাপোলো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জান্নাত ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিসেস থেকে ২ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছে ফারমার্স। এ ছাড়া ১৪ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণ জোড়া-তালি দিয়ে এখনও নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু পুরনো এবং উদীয়মান রাঘব-বোয়াল লুকিয়ে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর বড় গ্রাহক থেকে ৪৫৩ কোটি টাকা আদায় করেছি। একই সঙ্গে গত চার মাসে ক্ষুদ্র আমানতকারীকে ফেরত দিয়েছি ৯৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নতুন আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৬১ কোটি টাকা। তিনি বলেন, মানুষের আস্থা ফেরাতে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তনের চিন্তা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বড় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি। এগুলো হল- এটলাস গ্রিনপ্যাক লিমিটেড ৬০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ১ টাকাও পরিশোধ করেনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ৮২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যা পুরোটাই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এটি আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া মেসার্স শিতল এন্টারপ্রাইজ ৬৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি ৭৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, রোজবার্গ অটোরাইস মিলস ৫৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি প্রায় ৭০ কোটি টাকা, মেসার্স শাহেদ শিপ ব্রেকিং ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি ৪৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, নাহার ফারমার্স মায়া ফিড ১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি ১৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, আল ফারুক ব্যাগ ৫৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি ৩৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, নাহার ফারমার্স রাইস ব্র্যান অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ ৪৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি প্রায় ৮ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও দুই প্রতিষ্ঠান খেলাপি হওয়ার পথে। এর মধ্যে মেসার্স মেস শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ ৮২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১ টাকাও পরিশোধ করেনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এসকর্প অ্যাপারেলস ৭৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কিছু টাকা ফেরত দিলেও ব্যাংকের পাওনা ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। বকেয়া ঋণগুলো এখন খেলাপি হওয়ার পথে। এর বাইরে অ্যাডভান্সড রেডি মিক্স কনক্রিট ইন্ডাস্ট্রি মাত্র ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১ টাকাও পরিশোধ করেনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একইভাবে মিমু জুট মিলস ৩৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের পাওনা ৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা, মল্লিক অ্যাকুয়া কালচার ফার্ম ১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের পাওনা ১৭ কোটি ২৬ লাখ
টাকা, একটি গ্রুপ ৬০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৭০ কোটি টাকা, রংপুর জুট মিল ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের পাওনা ৬৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, জেসিকা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৬০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের পাওনা ৬৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা, অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের পাওনা ৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং অ্যাপোলো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের পাওনা ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ সব ঋণখেলাপি না দেখালেও পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।