এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মুখ্য উপসহকারী মন্ত্রী এলিস ওয়েলস বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি। গতকাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী।
এলিস ওয়েলস বলেন, ‘অগ্রসরমান অর্থনীতির বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাফল্য নির্ভর করছে এর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও কাঠামোর শক্তিশালী ভিত্তির ওপর। এ কারণেই এবারের সফরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে হওয়া বৈঠকগুলোয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেছি।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে এলিস ওয়েলস বলেন, রোহিঙ্গারা যেন নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের আগের বাসস্থানে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। চার দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মুখ্য উপসহকারী মন্ত্রী এলিস ওয়েলস প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। পরদিন রবিবার সকালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, এলিস ওয়েলসের সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে আমরাও প্রত্যাশা করছি বলে তাকে জানিয়েছি। রবিবার বিকালে তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের উদ্দেশে কক্সবাজার যান। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালামের সঙ্গে বৈঠকে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে এলিস ওয়েলস রোহিঙ্গাদের সহায়তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ব্যক্ত করেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও প্রশংসা করেন এলিস ওয়েলস। এলিস ওয়েলেসের কাছে রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতির নানা দিক তুলে ধরেন বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম। এ সময় ভাসানচরে কিছু রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর প্রসঙ্গ, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে কীভাবে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। গতকাল সকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এলিস ওয়েলস। তিনি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুমের কোনারপাড়া শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে যান এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং সেখানে নতুন আসা বেশকিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপ করেন। এ ছাড়া এলিস রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থার কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে সেই প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একযোগে কাজ করছে উল্লেখ করে এলিস ওয়েলস বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সবার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরকারও চাপ দিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। বিকালে ঢাকা ফিরে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের সঙ্গে এক নৈশভোজে অংশ নেন এলিস ওয়েলস। আজ তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।