এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : শ্রীলংকার রাজনৈতিক সংকট ক্রমশ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। কে শ্রীলংকার বৈধ প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে সাংবিধানিক ক্ষমতা ও প্রেসিডেন্টের দাপটের লড়াই জমে উঠেছে। এরই মধ্যে রোববার সকালে নতুন চমক নিয়ে আসেন দেশটির স্পিকার কারু জয়সুরিয়া।
রনিল বিক্রমাসিংহেকেই শ্রীলংকার বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি। বরখাস্তের তিন দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে লেখা এক চিঠিতে এ স্বীকৃতি দেন জয়সুরিয়া। তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতার জোরে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ফলে ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রে সাংবিধানিক সংকট আরও জটিল সমীকরণে গিয়ে দাঁড়াল।
বিক্রমাসিংহেকে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে রোববার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণে সিরিসেনা বলেন, তাকে গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রে বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিসভার এক সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। রোববারের মধ্যেই বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন টেম্পল ট্রিজ ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। এ সংকটের মধ্যেই আজ সোমবার নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন রাজাপাকসে। খবর এএফপি ও ডেইলি মিররের।
শুক্রবার ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) জোট থেকে সরে যান বিক্রমাসিংহে। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এদিনই রাজপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ দেন তিনি। গত সপ্তাহে সিরিসেনা অভিযোগ করেন, তাকে ও রাজাপাকসের ভাই গোতাভায়াকে খুনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে জেনেও গুরুত্ব দেয়নি বিক্রমসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)। সিরিসেনাকে খুনের ছক কষার অভিযোগে বৃহস্পতিবার নালাকা ডি’সিলভা নামে এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ এর সঙ্গে জড়িত বলে সিরিসেনা দাবি করেছিলেন। এসব নিয়েই আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল। বিক্রমাসিংহের জোট ত্যাগের ঘোষণায় সেই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটালেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এতে আরও বেঁকে বসেছেন বিক্রমাসিংহে। শনিবার নিজেকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি দাঁড়াতে প্রস্তুত বলেও জানান বিক্রমাসিংহে।
স্পিকারকে লেখা একটি চিঠিতে পার্লামেন্ট অধিবেশনের আহ্বান জানায় ইউএনপি। দলের চেয়ারম্যান কবির হাশিম ও সাধারণ সম্পাদক আকিলা ভিরাজ কারিয়াওয়াসামের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে সংবিধানের ৪২(৪) ধারা বাস্তবায়নে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করানো হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট বরাবর চিঠি লেখেন স্পিকার জয়সুরিয়া। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করছি রনিল বিক্রমাসিংহের পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকার অনুরোধ গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য। কারণ তিনিই সাংবিধানিক বলে দেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী।’ জয়সুরিয়া ইউএনপির সদস্য।
স্পিকার আরও বলেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে, গণতন্ত্র ও কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেয়ার। কারণ দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম বিষয়টিকে অসাংবিধানিক অ্যাখ্যা দিয়েছে। দেশের গণমাধ্যমও আপনি জোরপূর্বক দখলে নিয়েছেন।’ ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিতের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে জয়সুরিয়া বলেন, এই সিদ্ধান্ত শ্রীলংকার জন্য মারাÍক ও অনভিপ্রেত পরিণতি বয়ে আনবে।
২০১৫ সালে সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী অনুসারে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্তের কোনো ক্ষমতা নেই প্রেসিডেন্টের। প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট প্রয়োজন। শ্রীলংকার ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে বিক্রমসিংহের সমর্থনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১০৬ এমপি রয়েছে। আর ইউপিএফএ জোটের রয়েছে ৯৫ এমপির সমর্থন। অনাস্থা এড়াতে প্রয়োজন ১১৩ এমপির সমর্থন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনাস্থা ভোট ব্যর্থ করতে মাত্র ৭ এমপির সমর্থন দরকার বিক্রমাসিংহের। গত বছর তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোটে উতরে গিয়েছিলেন তিনি।
টেলিভিশন ভাষণে সিরিসেনা বলেন, আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিসভার একজন জড়িত বলে জানা গেছে। সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই ওই মন্ত্রীর নাম জানিয়েছে। আর এ জন্যই বিক্রমাসিংহের পুরো মন্ত্রিসভা বাতিল করতে তাকেই বরখাস্ত করাটা একমাত্র পথ ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘এ তথ্য এতদিন জনগণের কাছে অজানা ছিল।’ তবে কোন মন্ত্রী তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন তা নিশ্চিত করেননি সিরিসেনা।
এদিকে বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেকে রোববারের মধ্যে সরকারি বাসভবন ছেড়ে দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কেড়ে নেয়া হয় নিরাপত্তা প্রহরা। রাজধানী কলম্বোয় টেম্পল ট্রি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে বিক্রমাসিংহের হাজার হাজার সমর্থক। বহু বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নেতা বিক্রমাসিংহের নাম নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। পাশে অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দেখা গেছে সেনা সদস্যদের সাঁজোয়া যান। প্রেসিডেন্ট দফতরের সামনেও রয়েছে সেনা সদস্যের উপস্থিতি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিক্রমাসিংহেকে বাসভবন থেকে হটানোর জন্য তারা আদালতের আদেশের অপেক্ষা করছেন।