এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : পরিবহন শ্রমিকদের হাতে গত দু’দিন জিম্মি ছিল গোটা দেশ। টানা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সারা দেশের মানুষ। রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট শেষ হয় আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায়। কিন্তু তার আগেই আবারও ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। আগামী ২১ দিনের মধ্যে সড়ক আইনের সংশোধনসহ ফেডারেশনের আট দফা দাবি সরকার না মানলে এবার টানা ৯৬ ঘণ্টা বা চার দিন পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি সোমবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়।
ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সোমবারও সারা দেশের গণপরিবহন চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল। দেশের প্রায় প্রতিটি বাস ও ট্রাক টার্মিনালে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে রাখেন। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কোনো মহাসড়কে গণপরিবহন চলেনি। বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন চলাচলে বাধা দেন শ্রমিকরা। এমনকি মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বাধা দেন তারা। রাজধানী ঢাকায় রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআরটিসি ছাড়া অন্য কোম্পানির বাস চলেনি।
ধর্মঘটের কারণে গণপরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। বিকাল ৫টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা আমান হোসেন। তিনি জানান, এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো গাড়ি পাননি। বাধ্য হয়ে আগারগাঁও থেকে মহাখালী হেঁটেই রওনা হন। এ কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিকদের অমানবিক কর্মসূচিতে আমরা অতিষ্ঠ। এখন সময় এসেছে তাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার। এভাবে জিম্মি দশায় দেশ চলতে পারে না। ফার্মগেটে বিআরটিসির বাসের যাত্রী আকতার হোসেন বলেন, মিরপুর যাব। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। কোনো বাস তো নেই-ই, সিএনজি-অটোরিকশা চাইছে ৩০০ টাকা। এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই, তাই অপেক্ষা করছিলাম আর কিছু পাওয়া যায় কিনা। এ সময় বিআরটিসি বাস এসেছে দেখে সেখানেই উঠলাম। এ বাস না পেলে আজ আরও অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো।
সরেজমিন দেখা যায় রাজধানীর সায়দাবাদ, গাবতলী, ফুলবাড়িয়া ও মহাখালী বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে ভোর থেকেই যান চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। দিনভর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল থেকেও পণ্যবাহী কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ী এলাকায় শ্রমিকরা ইঞ্জিনচালিত সব যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। সকাল থেকেই পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রাবাড়ী এলাকায় এলোমেলোভাবে রাস্তায় অবস্থান নেন। কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশার ক্লাসের তার খুলে নেন। তবে কেরানীগঞ্জে যারা পরিবহন চালানোর চেষ্টা করেছেন, তাদের কয়েকজনের গায়ে কালি বা পোড়া লুব্রিকেন্ট মাখিয়ে দেন শ্রমিকরা। কয়েকজনকে কান ধরে ওঠবসও করান।
পরিবহন ধর্মঘটে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের গাড়ি চালাতে বাধা প্রদান, তাদের শরীরে মবিল মেখে দেয়া, কান ধরে ওঠবস, শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহনে বাধা দেয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেয়ায় হাসপাতালে নিতে না পারায় সাত দিন বয়সী শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায় কার? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক পরীক্ষা এবং জেএসসি পরীক্ষার আগে এ ধর্মঘটে তাদের যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তারা কি জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কোনো ইস্যু তৈরি করতে চাচ্ছেন?
এদিকে সোমবার বিকালে শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতারা এক বৈঠক করেন। সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাদেকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সরকারকে ২১ দিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে আবারও ৯৬ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংগঠনের দফতর সম্পাদক বাদল চৌধুরী এ তথ্য জানান। তবে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের কাছ থেকে আলোচনার ডাক না পাওয়া এবং জনদুর্ভোগের কারণে সমালোচনার মুখে থাকায় নতুন কর্মসূচির পথে যাননি নেতারা। বৈঠকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান উপস্থিত ছিলেন না।