এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে বসতে রাজি হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ফ্রন্ট ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনরাও সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
তারা মনে করেন, সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হবে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দ্বার উন্মোচিত হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সোমবার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে পুরো দেশবাসী আজ ঐক্যবদ্ধ। আমরা এ দাবি আদায়ে সরকারকে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। তারা এতে সম্মতি দিয়েছেন। এটি অবশ্যই একটি ভালো খবর। তিনি আরও বলেন, আশা করি আমরা একসঙ্গে বসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি গ্রহণযোগ্য উপায় বের করতে পারব। যাতে মানুষ তার ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। রোববার রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে একটি অর্থবহ সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেন।
পরদিন সোমবার বিকালেই এই চিঠির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে সম্মত। আমরা তাদের নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসব। তার এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় নতুন আলোচনা। বিষয়টিকে সবাই ইতিবাচকভাবে নেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় দলগুলোর একসঙ্গে বসাটা খুবই জরুরি। সরকারি দল সংলাপে সাড়া দিয়েছে এটা খুবই ভালো দিক। এতে করে জনমনে শান্তি এবং স্বস্তির পাশাপাশি রাজনীতিতেও সমঝোতার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আজকে জানতে পারলাম তিনি আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সংলাপে বসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমরা এ বিষয়টিকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের এখনও কবে ও কোথায় সংলাপ হবে তা জানানো হয়নি। এগুলো জানলে জানাব।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি কালকেই আমাদের সংলাপের জন্য ডাকেন আমরা অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দেব। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে তো আর অসম্মান করা যায় না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপকে সাধুবাদ জানিয়ে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, এই সংলাপ আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, তবে অবশ্যই সংসদের বাইরে থাকা অন্যান্য দলের সঙ্গেও সংলাপ করতে হবে আওয়ামী লীগকে। একই সঙ্গে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে করণীয় বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের একমত পোষণ করতে হবে। সংলাপ চেয়ে আপানারও চিঠি দেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, সংলাপের জন্য চিঠি দিতে হবে কেন? এটি একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া। নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে করণীয় ঠিক করতে চিঠি দিয়ে আলোচনার দরকার নেই। তিনি বলেন, আমরা একটি সংলাপ চাই এবং সেটি যেন অর্থবহ হয়।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৩ অক্টোবর নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এতে বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ বিশিষ্টজনরা রয়েছেন। জোটের পক্ষ থেকে সাত দফা ও ১১ লক্ষ ঘোষণা করা হয়। তাদের সাত দফার মধ্যে রয়েছে- সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না বলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনে করে। এছাড়া তারা নির্বাচনের আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনের পর আরও সাত দিন তাদের মাঠে রাখার দাবি জানিয়েছে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারেরও বিপক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।