এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পথ তৈরি করল সরকার। ব্যালট পেপারে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোটের পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মন্ত্রিসভার চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন, ২০১৯ সালের ছুটির তালিকা, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন ২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন, জাতীয় তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৮ এবং জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালা ২০১৮-এর খসড়াও অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। আরপিও সংশোধন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমান যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও, তা করা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। তা সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু সংসদ শেষ হয়ে গেছে, সে কারণে এটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। সংশোধনীর বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, প্রথমত, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে। এটি বাধ্যতামূলক নয়। কতগুলো কেন্দ্রে কীভাবে এটি ব্যবহার করা হবে, সেটি নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্ধারণ করা হবে। দ্বিতীয়ত, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ পরিশোধ করা যাবে। আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে তা পরিশোধ করতে হতো। এর কারণ হিসেবে বলেন, সময় যত বেশি পাবে, খেলাপি ঋণ তত বেশি আদায় হবে। তৃতীয়ত, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের পাশাপাশি একই নিয়মে অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে জনগণের মনে অহেতুক ভীতি আছে। এ বিষয়ে বলতে পারি, কোনো ইভিএম মেশিনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা থাকবে না। তাই এটিকে হ্যাকড করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া ভোট দিতে গিয়ে কোনো নাগরিক যাতে প্রতারিত না হয়, ইভিএমে সেই নিশ্চয়তা থাকবে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কথা বলার সময় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কেউ ভোট কেন্দ্রে হাঙ্গামা করলে, ইচ্ছাকৃতভাবে ইভিএম নষ্ট করলে কিংবা ইভিএম চুরি করলে তার দণ্ড হিসেবে সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিু তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’ ভোট গ্রহণকালে ইভিএমে গোলযোগ দেখা গেলে ভোট বন্ধ রাখা হবে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘এরকম কোনো সমস্যা হলে ওই কেন্দ্রে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।’
৩০ আগস্ট নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রস্তাব যাচাইয়ের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। ইসির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে আইন মন্ত্রণালয় তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠালে সোমবার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়।