এশিয়ান বাংলা ঢাকা : সংলাপে খোলা মনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ড. কামাল হোসেনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তার নীতি-নৈতিকতা আছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে চাচা বলে সম্বোধন করেন। যদিও তিনি ঐক্যফ্রন্টের বা ওই জোটের শীর্ষ নেতা কিনা আমরা নিশ্চিত নই। তিনি হয়তো শীর্ষ নেতা নন, এই জোটের নেতৃত্ব কি লন্ডন থেকে দেয়া হচ্ছে নাকি বাংলাদেশ থেকে দেয়া হচ্ছে তা সংলাপে বসার পর বোঝা যাবে। কোনো চাপে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের জন্য ড. কামাল হোসেন চিঠি দিয়েছেন। আমরা আমাদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নেত্রীর সঙ্গে একমত হয়েছি।
আমরা কালক্ষেপণ করিনি। শিডিউলের আগে যাতে সংলাপ হয়, এজন্য ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছি। আমরা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে এই সংলাপে সম্মত হয়েছি। এ কারণেই জননেত্রী শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেনকে ১লা নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই আলোচনা হবে খোলা মনে। তিনি বলেন, সংলাপ নিয়ে কোনো সংশয় না রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সংশয়বাদী, ১ তারিখের পর সেই সংশয় কেটে যাবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোনো চাপে এই সংলাপে বসছি না। সংলাপে বসার অর্থ কারও প্রতি নতি স্বীকার করা নয়। এমন তো না যে, দেশে মহাআন্দোলন হচ্ছে, সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বসছি। আমাদের পার্টি বলেছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দরজা কারও জন্য বন্ধ নয়। তিনি বলেছেন, তারা আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, আমি কেন সময় দেবো না। সংলাপের কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনারা চিঠির সঙ্গে উনাদের সাত দফা দাবি এবং এবং ১১টি লক্ষ্যের কপি সংযুক্ত করে দিয়েছেন। এসব নিয়েই আলোচনা হবে।
তবে সাত দফার মধ্যে কয়েকটি দফা আছে যা সংবিধান সম্পর্কিত। দুয়েকটি আছে আইন আদালতের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর দুয়েকটি আছে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কিত। সংলাপের আর কোন কোন বিষয়ে কথা হবে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দলীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা হবে, তাই এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলবো না। এই সংলাপকে ব্যতিক্রমধর্মী উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে কখনোই শেখ হাসিনার সঙ্গে কারও সংলাপ হয়নি। কাজেই এখন যে সংলাপ হচ্ছে, এটি একেবারেই এক্সেপশনাল। সংলাপের বিষয়ে সোমবার রাতে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুকে ফোন করেছিলেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, জানতে চেয়েছিলাম, আপনারা কয়জন আসবেন। উনি জানালেন যে, উনারা ১৫ জন আসবেন। তখন আমি বলেছি- ১৫ জন কেন, ২০ জন বা ২৫ জন নয় কেন? আপনারা ২০ জন, ২৫ জন যত জন খুশি আসতে পারেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই। সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কত জন থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে উনারা তালিকা দিক। আমরা দেখি, তারা কত জনের তালিকা দেন।
আমাদের কয়জন থাকবেন সেটা আমরা পরে ঠিক করবো। তালিকায় জামায়াতের লোকজন থাকলে আপনাদের অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিবন্ধনের বাইরে কারও আসার সুযোগ নাই। মাহমুদুর রহমান মান্নার দলতো নিবন্ধিত নয়, তিনি যদি তালিকায় থাকেন তাহলে আপনারা কি করবেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি ড. কামাল হোসেনের ওপর ছেড়ে দিন। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট রয়েছে, এক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করছি না। আমরা সংলাপ করছি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। সংলাপে বিএনপির লোকজন থাকবে কিনা আমরা এ ব্যাপারে কোনো শর্ত দিইনি। তবে সংলাপরে মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংলাপের উত্তাপে সংকটের বরফ গলবেই। তারা যেটিকে সংকট বলছে, আমরা সেটিকে সংকট মনে করি না। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক সংকটই সমাধান হয়ে যায়। এদিকে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধির সংখ্যা কমানোর বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে তিনি বলেন, আমি এমন কিছু বলিনি। কিছু কিছু পত্রিকায় খাবারের মেন্যু নিয়েও সংবাদ ছাপানো হয়েছে, এগুলো অপ্রয়োজনীয়, অপ্রত্যাশিত। এগুলো ঠিক নয়।
এই সংলাপের পর অন্য কোনো দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই সুযোগ নাই। তফসিল ঘোষণার পর আর কারও সঙ্গে সংলাপের সুযোগ নাই। এদিকে কোনো সংলাপ হবে না বলে আগে যে কথা বলা হয়েছিল সে ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগে সংলাপ নিয়ে আমরা যা বলেছি, তা আমাদের দলের পলিসি। আমরা সবাই একই টোনে কথা বলেছি। তারা (ঐক্যজোট) সাত দফা ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে কথা বলতে চান। আমরা ওয়েলকাম করেছি। উনারা আসবেন, কথা বলবেন। নির্বাচনের জন্য উনারা লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড চেয়েছেন। সেটি আছে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঐক্যফ্রন্টের দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় উনারা বিদেশি পর্যবেক্ষক চেয়েছেন, এতে আমাদেরও আপত্তি নাই। তবে এটা ইসির বিষয়। আপনারা বিশ্বাস রাখুন, আস্থা রাখুন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাদের ডেকেছেন। ড. কামাল প্রস্তাব দিয়েছেন, সেকারণেই তাদের ডাকা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নাই। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সহায়তা করবে সরকার। সরকারের আকার কেমন হবে এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। সোমবার ইভিএম ব্যবহারের জন্য আইন পাস করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা ডিজিটাল ক্রাইম করবে না, তাদের ভীত হওয়ার কিছু নাই। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করবে এই আইন।