এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। এর মধ্যে আগাম ভোট শুরু হয়ে গেছে। দেশটির প্রায় ১৭টি রাজ্যে আগাম ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচন। ৬ নভেম্বরের এ নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হাত বদল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ নির্বাচনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ‘চূড়ান্ত পরীক্ষা’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন তারা। জরিপও বলছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল জয়ী হবে। এ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক নারী প্রার্থী নির্বাচনে লড়াই করছেন। সিএনএন জানায়, ইতিমধ্যে জর্জিয়ায় ৫৬ শতাংশ আগাম ভোট পড়েছে। টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও টেনেসিতে ৫৪ শতাংশ এবং নেভাদায় ৫৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। আরিজোনা ও মিনেসোতায় ভোট পড়েছে ৫২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে আগাম ভোট দেয়ার নিয়ম রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিুকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের ৪৩৫ আসনের সবক’টিতে। আর ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ সিনেটের ৩৫ আসনে নির্বাচন হবে। এছাড়া একই দিন ৩৯ রাজ্যে গর্ভনর নির্বাচনও হবে। প্রতি চার বছর পরপর প্রতিনিধি পরিষদের সব আসনে নির্বাচন হয়ে থাকে। আর প্রতি দুই বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনের নির্বাচন হয়। সিনেট সদস্যদের মেয়াদকাল ৬ বছর।
এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক নারী, নেটিভ আমেরিকান ও মুসলিম প্রার্থী। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে ২৩৫, সিনেটে ২২ ও গর্ভনর পদে লড়ছেন ১৬ নারী। এর আগে ১৯৯২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ১০৬ নারী। সেবার প্রতিনিধি পরিষদে ২২ ও সিনেটে ৬ আসন দখল করেন নারীরা। ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক নারী।
তারা হচ্ছেন, রাশিদা তিলাইব ও ইলহান ওমর। উভয়েই ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন। প্রত্যাশা করা হচ্ছে উভয়েই সহজ জয় পাবেন। যদি এমনটি হয়, তাহলে তারা হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম যুগ্ম মুসলিম কংগ্রেস ওমেন। মিশিগানের ১৩তম কংগ্রেশনাল ডিসট্রিক্ট থেকে লড়ছেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান তিলাইব। ইলহান লড়ছেন মিনেসোটার পঞ্চম ডিসট্রিক্ট থেকে। তিনি সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৪ বছর বয়সে।
ডেমোক্রেটিক প্রার্থী আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কর্তেজ লড়ছেন নিউইয়র্কের ১৪তম ডিসট্রিক্ট থেকে। বিজয়ী হলে তিনি হবেন কংগ্রেসের ইতিহাসে নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ নারী। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে গভর্নর পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন স্ট্যাসি আব্রামস। আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী গভর্নর হিসেবে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখাতে চান তিনি। নিউ মেক্সিকোর প্রথম ডিসট্রিক্ট হাউসে প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আদিবাসী প্রার্থী ডেব হ্যালান্ড। নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি হবেন প্রথম নেটিভ আমেরিকান কংগ্রেস ওমেন।
হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ (নিুকক্ষে) ইতিমধ্যে সবচেয়ে ধনী ডেমোক্রেটদের একজন হচ্ছেন জারেড পোলিস। ৬ তারিখের নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সমকামী রাজ্য গর্ভনর। জনমত জরিপে তিনি রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াকার স্ট্যাপলেটনের চেয়ে সাত পয়েন্ট এগিয়ে আছেন।
জয়ী হবে ডেমোক্রেটিক দল- জরিপ : এ নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে অন্তত ২৩ আসন ও সিনেটে দুই আসন বেশি ছিনিয়ে আনতে পারলে ডেমোক্রেটরা কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। ক্ষমতার ভারসাম্যে বেকায়দায় পড়বেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও স্কলার স্কুলের একটি জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ভোটার ডেমোক্রেটিক দলকে সমর্থন দিয়েছেন। আরও ৪৬ শতাংশ সমর্থন দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের পক্ষে। ২৫ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চালানো এ জরিপে অংশ নেন ১ হাজার ৩৫০ জন। অতীত ইতিহাসও ডেমোক্রেটদের পক্ষে। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল মধ্যবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের দল প্রতিনিধি পরিষদে গড়ে ৩২ আসন এবং সিনেটে দুই আসন হারিয়েছে গত অর্ধ শতাব্দী ধরে।