এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সব নাটকীয়তার পর অবশেষে ভোটের মাঠে সবাই। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দেশের সবক’টি রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ায় রাজনীতির আকাশে দীর্ঘদিনের ‘কালো মেঘ’ অনেকটাই কেটে গেছে।
এর আগে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি ও অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টসহ আরও কয়েকটি দল।
পাশাপাশি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বামপন্থী দলগুলোও নির্বাচনী দৌড়ে পিছিয়ে নেই। রাজপথের জ্বালাও-পোড়াও নয়, আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা সবার। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রহর গুনছে পুরো জাতি।
এদিকে ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের তফসিল পেছাতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি সূত্র। আর ইসি নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত নিলে তাতে আপত্তি করবে না বলেও জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানান, নির্বাচন পেছানোর দাবির বিষয়ে কমিশনারদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি আজ সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এরই মধ্যে সব দলই পুরোদমে শুরু করেছে নির্বাচনের সার্বিক কার্যক্রম। উৎসবমুখর পরিবেশে ৩ দিন ধরে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রোববার বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। বিএনপি আজ থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করবে। এছাড়া বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ অন্যান্য দলও মনোনয়ন ফরম ছেড়েছে। মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে শোডাউনের পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে লবিং-তদবিরে ব্যস্ত তারা।
এদিকে আগামী নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ তৈরি করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকারও ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক মামলায় কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও নতুন করে মামলা না দিতে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে আসার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার নিজ দলের এক সভায় তিনি বলেছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তিনি সবকিছুই করবেন। জনগণ যাকে চায় তাকে ভোট দেবে। এর আগে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপকালে ফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার প্রতি আস্থা রাখুন। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, আমরা থাকব। আপনাদের ভোট দিলে আপনারা জিতবেন। নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি, জালিয়াতি কোনো কিছু হবে না। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার, ক্রেডিবল এবং অ্যাকসেপ্টেবল ইলেকশন হবে।
একই দিন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এ নির্বাচনে অংশ নেব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি নির্বাচন ১ মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় এ আমেজের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। চায়ের দোকান, অলিগলি, পাড়া-মহল্লা সর্বত্রই এখন আলোচনায় নির্বাচন। কোন আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন, কোন সেলিব্রেটি কোন দল থেকে নির্বাচন করছেন এমনটাই আলোচনা সর্বত্র। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎও বাড়িয়ে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন তারা। ঈদ কার্ড ও এসএমএস পাঠিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নেতাকর্মী ও নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে নিজেদের উপস্থাপন করছেন। ব্যানার-পোস্টারও টানানো হয়েছে তাদের পক্ষে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সব দল নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় রাজনীতির আকাশের অন্ধকার কেটে যাচ্ছে, সামনে সুন্দর আলোয় ঝলমলে দিনের প্রত্যাশা সবার। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। নির্বাচনে এমন পরিবেশ হবে, যাতে নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলবে না। এ প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব দল ভোটে আসায় এবারের নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে সবার প্রত্যাশা। তবে এক্ষেত্রে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সবাইকে আস্থায় আনতে হবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ সাত দফা থেকে তারা সরে আসেননি। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা ভোটে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সংকট চলে আসছিল। সরকার ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে দূরত্ব বাড়তে থাকে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকারবিরোধী প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। দফায় দফায় বৈঠকের পর অবশেষে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে আত্মপ্রকাশ হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।
সর্বশেষ এ ফ্রন্টে যোগ দেয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের পরই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে তারা। সংকট নিরসনে সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন ড. কামাল হোসেন। কোনো সংলাপ নয়- সরকারি দলের এমন অনড় অবস্থান থেকে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ড. কামাল হোসেনের চিঠির ইতিবাচক জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। ১ নভেম্বর সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন জোটে অন্তর্ভুক্ত ৭০টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে সুবাতাস বইতে শুরু করে। সাত দফা দাবি জানিয়ে সংলাপে অংশ নেয় ঐক্যফ্রন্ট। দু’দফা তাদের মধ্যে সংলাপ হয়। প্রধান দাবিগুলো মেনে না নিলেও কয়েকটি দাবি মেনে নেয় সরকার। এ সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলা বৈরিতার অবসান হতে থাকে। ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো মেনে নেয়া না হলেও এ জোটটি রোববার নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ভোটে যাওয়ার পেছনে পর্দার আড়ালে তাদের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা মনে করেন, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসায় রাজপথের জ্বালাও-পোড়াও থেকে রক্ষা পেয়েছেন সাধারণ জনগণ। এখন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে নির্বিঘ্নে সবাই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কয়েক মাস আগ থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উত্তরবঙ্গে নির্বাচনী ট্রেনযাত্রা ও চট্টগ্রামে সড়কপথে নির্বাচনী যাত্রা করেন। পাশাপাশি চলে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ও দলীয়ভাবে জরিপ চালিয়ে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
তফসিল ঘোষণার পর শুক্রবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলটি। গত ৩ দিনে প্রায় চার হাজারের মতো মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে। আজ মনোনয়ন বিক্রির শেষদিন। সব মিলে প্রায় পাঁচ হাজার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীরা কতটা আগ্রহী তা মনোনয়ন ফরম বিক্রি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে প্রস্তুতির কোনো কমতি নেই দলটির। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ায় নতুন করে কৌশল চূড়ান্ত করছেন তারা। ১৪ দলীয় জোটের পাশাপাশি মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি। মনোনয়ন চূড়ান্তের পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজ তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।
ঐক্যফ্রন্ট : সব নাটকীয়তা শেষে একাদশ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ জোটের প্রধান শরিক বিএনপি অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। প্রতিটি আসনে তারা সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিটি আসনে তিনজন করে সম্ভাব্য তালিকা তৈরির কাজ শেষ করেছেন। অনেকের সঙ্গে তিনি ফোনে কথাও বলছেন। কাউকে কাউকে ইতিমধ্যে সবুজ সংকেতও দেয়া হয়েছে।
দলের প্রার্থী তালিকার পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের আসন ভাগাভাগির কাজও তারা অনেক দূর এগিয়ে রেখেছেন। কোন দলকে কতটি আসন ছাড় দেয়া হবে সেই ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড একটি খসড়াও তৈরি করেছেন। শরিকদের কাছ থেকে তাদের প্রার্থী তালিকা চাওয়া হয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের মধ্যে কোনো সংকট হবে না বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
সূত্র জানায়, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভিশন ২০৩০ ও ঐক্যফ্রন্টের দেয়া ১১ লক্ষ্য সামনে রেখেই প্রস্তুত করা হচ্ছে এ ইশতেহার। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই ইশতেহার ঘোষণা করা হতে পারে।
জাতীয় পার্টি : প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। তিনশ’ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। রোববার দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে তারা। তবে জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে। একক না জোটগতভাবে নির্বাচন করবে তা দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে। তবে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা না করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। তিনি আরও বলেন, মহাজোট নিয়ে আলোচনা চলছে, দু-এক দিনের মধ্যেই ঘোষণা আসছে। সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ হবে।
ইসির প্রস্তুতি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে সারা দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রস্তুত করা হয়েছে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যাও। সারা দেশে পৌঁছে গেছে মনোনয়ন ফরম। ব্যালট পেপারও ছাপানোর কাজ শেষ। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে কঠোর বার্তা দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
তফসিল পেছানোর দাবির সিদ্ধান্ত আজ : রাজনৈতিক দল ও জোটের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জোর গুঞ্জন রয়েছে। রোববার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কক্ষে অন্য কমিশনারদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে ইসিতে চিঠি দেয়।
ইসিতে বিএনপির প্যাডে চিঠি পাঠায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট। এতে নির্বাচনের তফসিল ১ মাস পেছানোর দাবি জানানো হয়। অপরদিকে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের তফসিল ১ সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানায়। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানান, নির্বাচন পেছানোর দাবির বিষয়ে কমিশনারদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি আজ সিদ্ধান্ত জানাবেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলব। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রফিকুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা জাতীয় নির্বাচন ১ মাস পেছানোর দাবিও জানিয়েছে। আমরা তাদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব। রোববার বিকালে রংপুরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী এক কর্মশালায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নাম প্রকাশ না করে ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আজ কমিশনের কোনো নির্ধারিত সভা নেই। নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তন বা নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে কমিশনের সভার প্রয়োজন হবে। এদিন নির্বাচন কমিশনাররা ইভিএম মেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। তবে তারা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন পেছালে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সব দল ও জোট চাইলে নির্বাচন কমিশন পুনঃতফসিল ঘোষণা করতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সব রাজনৈতিক দল চাইলে নির্বাচন কমিশন আগামী সংসদ নির্বাচন পেছাতে পারে। রোববার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সুজনের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পর বদিউল আলম মজুমদার একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সচিব জানিয়েছেন নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি কমিশন শেষ করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচনের হলফনামা প্রচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রচারে ইসি সুজনকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১ মাস পেছানোর দাবি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- বিএনপি, ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গণতন্ত্র উদ্ধারের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে যে তফসিল ঘোষণা করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের তফসিল ১ মাস পেছানোর দাবি করা হয়।
অপরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১ সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়ে যুক্তফ্রন্টও ইসিকে চিঠি দিয়েছে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, তফসিল নিয়ে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী স্বল্প সময়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ, যাচাই-বাছাই, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি ব্যবস্থা করা কঠিন হবে।
নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ ১ সপ্তাহ পিছিয়ে ১৯ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৬ নভেম্বর করা হোক। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৯ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বরের পরিবর্তে ৫ ডিসেম্বর করা হোক। অনুরূপভাবে ভোট গ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর করা হোক।