এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কারাগারে থেকেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির অন্তত দুই ডজন নেতা। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যে সাতদফা দাবিকে মূলভিত্তি ধরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই দফা সংলাপ করেছিলেন ফ্রন্টের নেতারা তার অন্যতম দাবি ছিল রাজবন্দিদের মুক্তিদান। প্রধানমন্ত্রীর চাওয়ার প্রেক্ষিতে গায়েবি মামলা ও রাজনৈতিক মামলায় আটক নেতাদের একটি তালিকাও দিয়েছিল বিএনপি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি দেখছেন না বিএনপি নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিবারই একাধিক আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো পরাজয়ের রেকর্ড নেই তার নির্বাচনী ইতিহাসে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন আইন হওয়ার আগে প্রতিটি নির্বাচনে তিনি ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতেই বিজয়ী হয়েছেন। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজা হওয়ায় তিনি এখন কারাবন্দি রয়েছেন।
তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কারাগারে থাকলেও তার পক্ষে বগুড়া-৬/৭ ও ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান এসব মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক মনিরুল হক চৌধুরী। সাবেক এই এমপি একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু একটি মামলায় জামিন বাতিল হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে মামলায় জামিন পেলেও নতুন দুইটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় তার মুক্তি মেলেনি। তবে তার পক্ষে কুমিল্লা-৬ ও ১০ দুই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা-১০ আসন থেকে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়েছেন ব্যবসায়ী মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। দুই মাস ধরে তিনিও কারাবন্দি রয়েছেন। তার পক্ষেও জমা দেয়া হয়েছে দলীয় মনোনয়ন ফরম।
দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে কারাবন্দি রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি লড়েছেন চট্টগ্রাম-৪ আসনে। এবারও তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন বড় ভাই ইসহাক কাদের চৌধুরী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাবন্দি রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে লড়েছিলেন ঢাকা-৮ আসনে। একাদশ নির্বাচনেও এ আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কারাগারে থাকলেও তার পক্ষে অনুসারী নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ১০ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। তার পক্ষে পাবনা সদর আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
কারাগারে রয়েছেন বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন। নবম জাতীয় নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়েছিলেন। এবারও তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারা। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার পক্ষে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন নেতাকর্মীরা। একই আসন থেকে কারাবন্দি আবু সাঈদ চৌধুরীর পক্ষেও সংগ্রহ করা হয়েছে দলীয় মনোনয়ন ফরম। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে এক সপ্তাহ আগে ঢাকার কোর্ট কাচারি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন। মহানগরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে বিএনপির মূল মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করও একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু বর্তমানে মহানগর বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতাই কারাবন্দি রয়েছেন। তবে তাদের পক্ষে নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দুইজনের মধ্যে যিনিই মনোনয়ন পান নির্বাচনের আগে জামিন না পেলে কারাগারে থেকেই তাকে লড়তে হবে ভোটের লড়াই।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের সাবেক এমপি ও দলের শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮ই নভেম্বর। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা থেকে ফেরার পথে তিনি গ্রেপ্তার হন। তার পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন স্ত্রী ফাতেমা আজাদ। দলের প্রকাশনা সম্পাদক ও একাধিকবারের সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। দুই মাসের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি রয়েছেন তিনি। তবে তার পক্ষে সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে অনুসারী নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু দুই শতাধিক মামলা নিয়ে কারাগারে রয়েছেন কয়েক মাস ধরে। ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়েছিলেন তিনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তার জন্য টাঙ্গাইল-২ ও ৫ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। টুকুর বড় ভাই সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুস সালাম পিন্টুর জন্যও টাঙ্গাইল-২ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন তাদের আরেক ভাই জেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম তোফা ও পিন্টুর দুই মেয়ে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান কারাবন্দি রয়েছেন আড়াই শতাধিক রাজনৈতিক মামলায়। ঢাকা-১৫ আসন থেকে ধানের শীষের প্রধান মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি। তার পক্ষে স্ত্রী ডলি হাসানসহ নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। ঢাকা-৭ আসনের জন্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কারাবন্দি ইসহাক সরকারের পক্ষে মনোনয়ন জমা দেন নেতাকর্মীরা।
১৪ই নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বগুড়ার সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, দলের গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু এবং খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খানকে। তিনজনই নিজ নিজ আসন থেকে বিগত সময়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং এবারও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
ঝালকাঠি-২ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু। গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তারের পর দুই মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন তিনি। তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়া হয়েছে। রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ কারাগারে রয়েছেন। তার পক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ছিলেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী। এ ছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গ দলের অন্তত শতাধিক কারাবন্দি নেতার পক্ষে সংগ্রহ ও জমা দেয়া হয়েছে দলীয় মনোনয়ন ফরম।