এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : প্রথমবারের মতো নৃশংস গণহত্যার দায়ে দুই খেমাররুজ নেতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনাল। তারা হলেন, খেমাররুজ সরকারের নেতা পোল পটের ডেপুটি নুওন চে (৯২) ও তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্ফান (৮৭)। পোল পটের ‘ডান হাত’ নুওন চে কম্বোডিয়ার মানুষের কাছে ‘ব্রাদার টু’ নামে পরিচিত ছিলেন। চ্যাম মুসলিম ও ভিয়েতনামিদের গণহত্যার দায়ে শুক্রবার তাদের এই যাবজ্জীবন দেন দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি চেম্বারস ইন দ্য কোর্টস অব কম্বোডিয়া (ইসিসিসি)। বিচারক নিল নন দীর্ঘ এই রায় পাঠ করেন। খেমাররুজ শাসনকালে নির্যাতনের শিকার বহু মানুষ এই সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ বিচার দেখার জন্য খেমাররুজ শাসকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। খেমাররুজ সরকারের কর্মকাণ্ড যে গণহত্যা ছিল, সেটারই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হল এই রায়ে। খবর বিবিসি, রয়টার্সের।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খেমাররুজ সরকারের অধীনে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রায় ২০ লাখ খেমার জাতীয়তার মানুষকে হত্যা করা হয়, যা দেশটির ওই সময়ের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যার সংজ্ঞা অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় কম্বোডিয়ার বিশাল জনগোষ্ঠীর নিধনযজ্ঞকে এর আওতায় আনা যাচ্ছিল না। ফলে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে। দণ্ডিতরা এরই মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। দুই খেমাররুজ নেতার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিয়ে, ধর্ষণ ও ধর্মীয় হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু নুওন চিয়া চ্যাম মুসলিম ও ভিয়েতনামিদের নির্মূল করতে চেয়েছিলেন এবং খিউ সাম্ফান ভিয়েতনামিদের গণহত্যা করেছিলেন- এ অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় এই রায় ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ‘ব্রাদার ওয়ান’ পল পটের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীকে হটিয়ে খেমাররুজ গেরিলারা তৎকালীন কম্পুচিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করে নেয়। নমপেন দখল করে পল পট সরকার মূলত কৃষি সংস্কারের নামে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ চালায়। পল পট ১৯৯৮ সালে কম্বোডিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান।