এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ফ্রান্সের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সাম্রাজ্যবাদী শাসক। ১৮০৫ থেকে ১৮১২ সাল পর্যন্ত মাত্র ৭ বছরে সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইউরোপে একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। সেইসঙ্গে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন সেই সাম্রাজ্য বিস্তৃত করতে।
দুশো বছর পরে এসে নেপোলিয়নের সেই ভূতই চেপেছে ফ্রান্সের ঘাড়ে। পূর্বপুরুষের সেই বিতর্কিত সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থাই ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছে নব্য ফরাসিরা। তবে নেপোলিয়নের মতো ‘এক হাতে’ নয়। পুরো ইউরোপকে নিয়ে জোট বেঁধে সবার সঙ্গে।
সপ্তাহখানেক আগে সেই খায়েশ প্রথম প্রকাশ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা। এক্ষেত্রে ‘ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী’ গড়ে তোলার আহ্বান ও প্রস্তাব জানান তিনি। প্রস্তাবের পক্ষে ঘরে-বাইরে দারুণ সাড়া পেয়েছেন ম্যাক্রোঁ। ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও ফরাসি অর্থমন্ত্রী ব্র“নো লি মেয়ার।
সপ্তাহখানেক আগে প্যারিসের রেডিও চ্যানেল ‘ইউরোপ ওয়ান’কে সাক্ষাৎকার দেন প্রেসিডেন্ট ম্যাত্রেঁদ্ধা। সেখানেই ‘ইউরোপের সমন্বিত সেনাবাহিনী’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন তিনি। বলেন, ‘চীন ও রাশিয়া ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনাধীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও নির্ভর করা যায় না।
ট্রাম্পের নেয়া কিছু পদক্ষেপ ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির কথা মাথায় রেখেই আমাদের নিরাপত্তা আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।’ কোনো রাখঢাক না রেখেই সরাসরি ম্যাত্রেঁদ্ধার এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছেন তার অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লি মেয়ার।
তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউরোপের প্রতিদ্বন্দ্বী। এদেরকে প্রতিহত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অবশ্যই ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলতে হবে।
মঙ্গলবার জার্মান পত্রিকা হ্যান্ডেলসব্ল্যাত-এ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। তার ব্যবহৃত ‘সাম্রাজ্য’ শব্দটি নিয়ে সাংবাদিকরা আপত্তি তুললে ব্র“নো এর ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করে বলেন, ‘আমাকে ভুলভাবে নেবেন না। সাম্রাজ্য বলতে আমি ‘শান্তিপূর্ণ’ সাম্রাজ্যের কথা বলছি। আমি শব্দটির ব্যবহার করেছি শুধু আগামী বিশ্বের ক্ষমতার কাঠামো ও এর ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।’
এদিকে একইদিন স্ট্রাসবুর্গে ইইউ পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে মার্কেল বলেন, ‘একটি সত্যিকারের ইউরোপীয় সেনাবাহিনী গঠনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘একটি একক ইউরোপীয় সেনাবাহিনী বিশ্বকে দেখিয়ে দেবে যে, ভবিষ্যতে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে কখনও যুদ্ধ হবে না।’
এই সেনাবাহিনী ন্যাটোর বিকল্প হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন জার্মান চ্যান্সেলর। ইউরোপীয় সেনাবাহিনী ন্যাটোর কাজে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।