এশিয়ান বাংলা, চাঁদপুর : সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শুক্রবার দুপুরে এহছানুল হক মিলনকে চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সফিউল আজমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে তিনটি মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আগামী রোববার এসব মামলার শুনানি হতে পারে বলে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর আইনজীবী জানিয়েছেন।
এহছানুল হক মিলনের আইনজীবী কামরুল ইসলাম জানান, মিলনের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের কচুয়া থানা ও আদালতে হত্যা, চুরি, ছিনতাই, লুটপাট, ভাঙচুর, সন্ত্রাসী হামলাসহ ২৫টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মামলায় মিলনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
৪৪৯দিন জেল খাটার পর ২০১২ সালের ৫ জুন জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান মিলন। এ মাসের মাঝামাঝি তিনি গোপনে দেশে ফিরে আত্মগোপনে ছিলেন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, মিলনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলায় পরোয়ানা থাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। মিলনকে রাতে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম থেকে শুক্রবার সকালে আনা হয় চাঁদপুরে। জেলা ডিবি কার্যালয়ে ও কোর্ট পুলিশ কার্যালয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা রাখার পর বেলা পৌনে ১টায় আদালতে ওঠানো হয়। বেলা সোয়া ১টায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রায় ৫ বছর বিদেশে পালিয়ে থাকা ১৭ মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি বিএনপির সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরের পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। মিলনকে চট্টগ্রামের চকবাজার থানার চটেশ্বরী এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩ নভেম্বর থেকে ওই বাসাতেই ছিলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পর মিলনকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
জানা যায়, চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসন থেকে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে এ মাসের মাঝামাঝি বিদেশ থেকে দেশে আসেন মিলন। দেশে এসে মিলনের চাঁদপুরের আদালতে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও হাজির হননি তিনি।
এক সপ্তাহ ধরে মিলনের সঙ্গে পুলিশের চোর-পুলিশ খেলা শুরু হয়। মিলনকে গ্রেপ্তারে ছয় দিন ধরে চাঁদপুরের আদালত চত্বরে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গত বুধবার সকাল থেকেও চাঁদপুর সদর পুলিশ সুপার (সার্কেল) জাহেদ পারভেজের নেতৃত্বে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কয়েকটি দল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা জজ আদালতের প্রতিটি প্রবেশ মুখ ঘিরে রাখে। তাই গ্রেপ্তার-আতঙ্কে গত ছয় দিনেও আদালতে আসেননি মিলন।
মিলনের আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, এভাবে আদালতের চতুর্দিকে পুলিশ প্রহরা থাকলে মিলন কেন, কোনো আসামিই আদালতে ভয়ে ঢুকতে পারবেন না। এ ব্যাপারে জাহেদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা মিলনের জন্য কোনো নিরাপত্তাবলয় তৈরি করিনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকারি প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
মিলনের স্ত্রী নাজমুননাহার বেবির ভাষ্য, ‘মিলনসহ কচুয়ার বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী আদালতে গ্রেপ্তারের ভয়ে হাজির হতে পারছিলেন না। আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিতভাবে নির্বাচনের আগে এই হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম।’ কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেননি বলে দাবি বেবির।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে মিলন, তাঁর স্ত্রী নাজমুননাহার বেবিসহ কচুয়ার শত শত বিএনপি নেতা-কর্মীকে আওয়ামী লীগের সাংসদ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের লোকজন ও নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন মামলা দিয়ে ও হামলা চালিয়ে কচুয়াছাড়া করে রেখেছেন। আদালতে মিলনের বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি, ছিনতাই, লুটপাট ও ভাঙচুরের ২৫টি মামলা রয়েছে।