প্রথমবারের মতো মুসলিম মেয়র পাচ্ছেন কলকাতা নগরের মানুষ। পরকিয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের মেয়র পদ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগের পর এই সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর আগে মঙ্গলবার শোভন মন্ত্রিত্বের পদত্যাগপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছান। একাধিক মন্ত্রিত্বে থাকা শোভন মমতারই কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
শোভনের স্থলে নতুন মেয়র হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। স্বাধীনতার পর এই প্রথম কলকাতা করপোরেশনে প্রথম কোনো মুসলিম মেয়র হতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ অসুস্থ থাকায় তার স্থলে আনা হচ্ছে অতীন ঘোষকে।
কিন্তু কেন কলকাতা করপোরেশনের কোনো নির্বাচিত কাউন্সিলরকে এই পদে বসানো হলো না—এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেননা ফিরহাদ হাকিম নির্বাচিত কাউন্সিলর নন। অবশ্য ফিরহাদ হাকিমকে মেয়র করার জন্য বৃহস্পতিবারই রাজ্য বিধানসভায় পৌর করপোরেশন আইনে সংশোধনী আনা হয়। নতুন আইনে বলা হয়, কাউন্সিলর ছাড়াও অন্য কাউকে মেয়র পদে বসানো যাবে। তবে তাকে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে করপোরেশনের কোনো এলাকা থেকে কাউন্সিলর হয়ে আসতে হবে। তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতার তৃণমূলের কাউন্সিলরদের বৈঠক ডেকেছেন মমতা। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হচ্ছে মেয়র পদে ফিরহাদ হাকিম ও ডেপুটি মেয়র পদে অতীন ঘোষের নাম।
পদত্যাগী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় শুধু কলকাতার মেয়রই ছিলেন না। তিনি রাজ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও ছিলেন। একাধারে তিনি ছিলেন পরিবেশ, দমকল ও আবাসনমন্ত্রী। এ ছাড়া তাকে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব। অবশ্য এর আগে তাকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছিল।
এত পদের দায়িত্বে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায় একসময় পারিবারিক অশান্তিতে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি নিজেই স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সাথে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা ঠুকে দেন। ওই মামলা এখনো চলমান। আর এসবের মধ্যে শোভন চট্টোপাধ্যায় এক অধ্যাপিকার সাথে বন্ধুত্বে জড়িয়ে পড়েন। তার এই পারিবারিক সংকট মুখ্যমন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছায়।
মমতা তাকে সবকিছু ভুলে স্ত্রীর সাথে সংসার করার আহ্বান জানান। কিন্তু শোভন মমতার সে কথা রাখেননি। এ নিয়ে আগস্ট মাসে প্রথম প্রকাশ্যে শোভনকে ভর্ৎসনা করেন মমতা। এরপর শোভন মুখ্যমন্ত্রীকে মেয়র ও মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠি দেন। তবে ওই সময় মমতা শোভনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে এসে মমতা স্পিকারের ঘরে ডেকে নেন শোভনকে। সেখানে ফের মমতা ভর্ৎসনা করেন শোভনকে। এরপরই ওই দিন বিকেলে শোভন চট্টোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব গৌতম সান্যালের হাতে মন্ত্রিত্ব পদে ইস্তফা দেওয়া চিঠি পৌঁছে দেন। এরপর রাতেই মমতা জানান, ‘ওকে বুঝিয়েও বোঝানো যায়নি, ওর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে শোভনের পদত্যাগের খবরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘শোভনের জন্য তাদের দরজা খোলা রয়েছে। কেউ আমাদের দলে আসতে চাইলে আসতে পারেন।’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন