এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দেশের ৮টি বিভাগে স্বতন্ত্র’র নামে ৯১ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন না পেয়ে তারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষে কাজ করতে রাজি নন তারা। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে একাধিকবার কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্রোহী হলেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার। কিন্তু দলের ওই বার্তা মানছেন না তারা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি বেশিরভাগ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়াদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থী বদলের দাবি জানাচ্ছেন।
এতে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় প্রকাশ্য বিরোধ প্রকট হয়ে উঠছে। দিন যত এগোচ্ছে পরিস্থিতি ততই বেসামাল হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। কড়া বার্তার পাশাপাশি স্বতন্ত্রদের বুঝিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
কাউকে কাউকে পরবর্তীকালে মূল্যায়নের আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আমরা ৭৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা জানতে পেরেছি। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত কাউকে বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করছি না। প্রত্যাহারের সময়সীমার পর যারা থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা মানবজমিনকে বলেন, এসব ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ঘুম হারাম করছে। ‘বিদ্রোহী’ এসব প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়বে দলীয় প্রতীকধারীদের। দলীয় পদধারী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিবৃত্ত করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২রা ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এসব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য রাজি করানো হবে। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আশায়। এদের মধ্যে যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে প্রার্থীর সংখ্যা তিন হাজার ৬৫। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৪৯৮। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৪ জন। অপর বিভাগের মধ্যে সিলেটে ২২, ঢাকায় ৯৮, রংপুরে ৬৯, রাজশাহীতে ৫৯, খুলনায় ৫৪, বরিশালে ২৭, ময়মনসিংহে ৩৫। এদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিদ্রোহীদের বিষয়ে দুই দফা কড়া বার্তা দিয়েছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না, কে বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী হলে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী জানিয়েছেন, কাগজে-কলমে এখনও তাদের বিদ্রোহী বলা যাবে না। দল যদি মনোনয়ন পরিবর্তন করে সে আশায় রয়েছি। মেহেরপুর-১ আসনে সাবেক এমপি জয়নাল আবেদিন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এবার স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তিনি বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নৌকার পক্ষের প্রার্থী হয়ে যাবো। আমাকে মনোনয়ন না দিলে এবার আসনটি আওয়ামী লীগ হারাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কারণ হিসেবে বলেন, এখানে বিএনপির শক্ত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ। তাকে হারানোর মতো জনপ্রিয়তা কেবল আমারই রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও যারা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন সে তালিকায় ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আব্দুল্লাহ আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে কাউসার আহমেদ পলাশ, নরসিংদী-৩ আসনে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা,নরসিংদী-২ আলতামাস কবির মিশু, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন, ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম। চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছেন ১৫ জন। তারা হলেন- ফেনী-১ আসনে খায়রুল বাশার তপন ও শেখ আব্দুল্লাহ, ফেনী-৩ আসনে আবুল বাশার, ইশতিয়াক আহমেদ ও হাজী রহিম উল্যাহ, কুমিল্লা-২ আসনে অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ, মাঈন উদ্দিন মঈন, হাজী মো. সফিউল্লাহ মিয়া, মো. আনিছুর রহমান, অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর হোসেন কাউছার, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন মন্তু, মো. মোখলেছুর রহমান ও মো. শাহজাহান আলম সাজু, চট্টগ্রাম-২ আসনে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম-৪ আসনে আবদুল্লা আল বাকের ভূঁইয়া। রাজশাহী বিভাগে আছেন ১৪ জন। তারা হলেন- নওগাঁ-২ আসনে ড. ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম, নওগাঁ-৪ আসনে অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী ও আফজাল হোসেন, নওগাঁ-৬ আসনে আনোয়ার হোসেন হেলাল,নড়াইল-১ আসনে লে. কমান্ডার ওমর আলী, বগুড়া-২ আসনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা ও আবুল কাশেম ফকির, বগুড়া-৪ আসনে কামাল উদ্দিন কবিরাজ ও অধ্যাপক আহছানুল হক, বগুড়া-৫ আসনে তাহরিনা জামান হিমিকা, বগুড়া-৭ আসনে ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, রাজশাহী-৫ আসনে ওবায়দুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও খুরশিদ আলম বাচ্চু।
খুলনা বিভাগে আছেন ২১ জন। তারা হলেন- মেহেরপুর-১ আসনে অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, জয়নাল আবেদীন, প্রফেসর আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান, মেহেরপুর-২ আসনে এমএ খালেক, আহমেদ আলী, মোখলেসুর রহমান মুকুল, নুরজাহান বেগম ও ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, যশোর-২ আসনে অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হক, যশোর-৫ আসনে কামরুল হাসান বারী, সাতক্ষীরা-১ আসনে ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান, সরদার মুজিবর রহমান,বিএম নজরুল ইসলাম, শেখ নুরুল ইসলাম ও বিশ্বজিৎ সাধু, কুষ্টিয়া-১ আসনে আ.কা.ম সরওয়ার জাহান বাদশা, রেজাউল হক চৌধুরী ও আফাজ উদ্দিন মোল্লা। বরিশাল বিভাগে আছেন ৬ জন। তারা হলেন- বরিশাল-২ আসনে একে ফায়জুল হক রাজু, ইঞ্জিনিয়ার ওসমান ফারুক মনির, এম মোয়াজ্জেম হোসেন ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার, বরিশাল-৬ আসনে ইঞ্জিনিয়ার ওসমান হোসেন মনির ও মোহাম্মদ আলী তালুকদার। রংপুর বিভাগে আছেন ১১ জন। তারা হলেন- দিনাজপুর-২ আসনে ডা. মানবেন্দ্র রায়, নীলফামারী-১ আসনে আমিনুল হোসেন সরকার,নীলফামারী-৩ আসনে অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, আনসার আলী মিন্টু, আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর, নীলফামারী-৪ আসনে আখতার হোসেন বাদল, ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্দার আলী, আমেনা কহিনূর ও মো. আমিনুল ইসলাম সরকার, কুড়িগ্রাম-১ আসনে ওসমান গণি, কুড়িগ্রাম-২ আসনে আবু সুফিয়ান। সিলেট বিভাগে আছেন দুজন। তারা হলেন- সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মতিউর রহমান, হবিগঞ্জ-১ আসনে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। ময়মনসিংহ বিভাগে আছেন ১৬ জন।
তারা হলেন-ময়মনসিংহ-৩ আসনে ডক্টর অধ্যক্ষ একেএম আব্দুর রফিক, ডা. মতিউর রহমান, আলী আহাম্মদ খান পাঠান, সেলভী নাজনীন, আলম শরীফ হাসান অনু, সামিউল আলম লিটন ও মুর্শেদুজ্জামান সেলিম, ময়মনসিংহ-৮ আসনে সৌমেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, মাহমুদ হাসান সুমন, ময়মনসিংহ-৯ আসনে মেজর জেনারেল (অব) আব্দুস সালাম, ময়মনসিংহ-১০ আসনে ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুল, ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসনে অ্যাডভোকেট আশরাফুল হক, নেত্রকোনা-১ আসনে মোস্তাক আহমেদ রুহী, মো. এরশাদুর রহমান ও কুতুব উদ্দিন রুয়েল, নেত্রকোনা-৪ আসনে শফী আহমেদ।