এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : অনেক জল্পনা-কল্পনার পর সারা দেশে ৬টি সংসদীয় আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইভিএম ব্যবহার করা ৬টি আসনের মধ্যে ঢাকাতে দুটি। এগুলো হলো- ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৩ আসন। এদিকে নির্বাচনের বাকি নেই এক মাসও। কিন্তু ভোটাররা এখনো জানেন না কীভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দেবেন। আবার অনেকে বলছেন, ইভিএম কি এটা তারা কখনো দেখেন নাই। এ নিয়ে ঢাকা-১৩ আসনের বসিলা এলাকার চা-দোকানি মিজান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে টিভিতে দেখতেছি এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি এটা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না।
আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের যে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিতে হবে সেটা আমি এখনো দেখিই নাই।
স্থানীয় চিকিৎসক আবু সাঈদ বলেন, আমরা সারা জীবন ভোট দিয়ে এসেছি এক রকম। এখন নতুন পদ্ধতিতে ভোট দিতে হবে। এটা আমার কাছে রোমাঞ্চকর লাগছে। তবে আমি এখনো জানি না এটা দিয়ে কীভাবে আমি ভোট দেব।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী মোস্তাক বিল্লাহ বলেন, আমি একদিন এই মেশিনটা টিভিতে দেখছি। শুনেছি আমাদের আসনেও এই মেশিনের মাধ্যমে ভোট দিতে হবে। তবে এখনো জানি না এটা দিয়ে কীভাবে ভোট দিতে হয়। আর আমরা যদি এই মেশিন দিয়ে ভোট দিতে না পারি তাহলে এটা কী দরকার ব্যবহারের। তবে স্থানীয় কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী আবুল হাসেম (হাসু) বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার বাইরে রয়েছি। শুনেছি আমাদের আসনে ইভিএমে ভোট দিতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে কিছুই জানি না। স্থানীয় একজন প্রতিনিধি হিসেবে ভোটারদের এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন কি না জানতে চাইলে হাসু বলেন, আসলে বিষয়টা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। কমিশন চাইলে এ বিষয়ে আমি তাদের সহযোগিতা করবো। তবে এটা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো কিছু করবো না। ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম রতন জানালেন ভিন্ন কথা। ইভিএমে ভোটিং পদ্ধতিটা ভোটারদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। নুরুল ইসলাম রতন বলেন, আমার ওয়ার্ডে প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র। তারা অতটা পড়ালেখাও জানে না। কিভাবে ইভিএম-এ ভোট দেবেন? আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন ভোটারদের ওপর এটা চাপিয়ে দিয়েছে। আর আমার মনে হয়, এই কারণে ভোটের দিন ৩০ শতাংশ ভোট কাস্ট হবে। আমি নিজ উদ্যোগে ভোটারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এজন্য ইভিএম নিয়ে একটি শর্ট ফিল্মও বানানোর কাজ শুরু করেছি। চলতি মাসের ১২ তারিখ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কাউন্সিলরদের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইভিএমের বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচন কমিশন।
তবে সেখানে কাউন্সিলরদের ইভিএমের বিষয়ে কমিশন পরিপূর্ণভাবে কোনো ধারণা দেননি বলে জানান নুরুল ইসলাম রতন। ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দাখিল করা আতাউর রহমান ঢালি বলেন, আমি এখন পর্যন্ত এই ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে নই। কারণ আমার ভোটারদের এটা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই। আর পৃথিবীর প্রায়ই রাষ্ট্রেই এটা ব্যবহারের পর ফের বন্ধ করা হয়েছে। কারণ এটার মাধ্যমে খুব সহজেই ভোট কারচুপি করা যায়। তাই আমি শেষ পর্যন্ত এটা বন্ধের দাবি জানিয়ে যাব। এটা আমি সমর্থন করতাম যদি, আগ থেকেই ভোটারদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো। নিজ উদ্যোগে ভোটারদের ইভিএম’র বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ দেবেন কি না জানতে চাইলে আতাউর রহমান ঢালি বলেন, আমি চাইলেও এটা করতে পারবো না। কারণ, আমার আসনে ৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। আর প্রত্যেকটা মেশিনের অনেক খরচ। তাই এটা প্রশিক্ষণ দেয়া যে কোনো প্রার্থীর একার পক্ষে অনেকটাই অসম্ভব।
ঢাকা-৬ আসনের ভোটাররাও ইভিএমের বিষয়ে বলছেন একই কথা। গেন্ডারিয়া এলাকার দিন মজুর মোখলেসুর রহমান বলেন, এটা কি আমি জানি না। আজীবন আমরা টিপ সই দিয়ে ভোট দিয়েছি। এবার নাকি নতুন নিয়মে ভোট দিতে হবে। দয়াগঞ্জ এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সফিক বলেন, আমি শুনেছি এবার মেশিনে ভোট দিতে হবে আমাদের। এই মেশিনটা আমি এখনো দেখিই নাই। কীভাবে ভোট দেব কিছুই জানি না। এ নিয়ে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল্লাহ মিনু বলেন, আমি ইতিমধ্যে আমার ভোটারদের এই ইভিএমের বিষয়ে অবগত করছি। আমি নিজ উদ্যোগে ভোটারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার চিন্তা করছি। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যদি ভোটারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তারা অনেক উপকৃত হবে।