এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তিন আসনেই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আসনগুলো হল- ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭।
এর মধ্যে বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী মোরশেদ মিল্টনেরও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তবে বাকি দুই আসনে বিকল্প প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বগুড়া ৬-এ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ফেনী ১-এ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনু বিকল্প প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।
খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রতিবাদে রোববার সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা। মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল।
খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও তাকে তিনটি আসনে প্রার্থী করে বিএনপি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৮ ফেব্র“য়ারি থেকে সাজা ভোগ করছেন তিনি। আট মাসের মাথায় ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পরদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
দুটি মামলায় সাজার কথা উল্লেখ করে ফেনীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ উজ্জামান রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
খালেদা জিয়া ছাড়াও ওই আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূর আহম্মদ মজুমদার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান ও আবুল বাশার চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তবে ওই আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী রফিকুল আলম মজনুর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন তিনি।
ফেনী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাসদের শিরীন আখতার এবারও ক্ষমতাসীন জোটের পক্ষে প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তার যাচাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এ আসনে ১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বৈধতা পেয়েছে ১০ জনের। এরা হচ্ছেন- জাসদের শিরীন আখতার, বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, ইসলামী আন্দোলনের কাজী গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের শাহরিয়ার ইকবাল, গণফোরামের এবিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, খেলাফত আন্দোলনের আনোয়ার উল্লাহ ভুঁইয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) শেখ আবদুল্লাহ ও খায়রুল বাশার মজুমদার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের তারেকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কাজী নুরুল আলমের মনোনয়নপত্র।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলেও বিএনপি মহাসচিবের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়েজ আহম্মদ। তিনি জানান, এ আসনে জমা পড়া ১১টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে তিনটি বাতিল হয়ে গেছে।
ফলে বৈধ প্রার্থী থাকছেন ৮ জন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিরোধী দলের চিফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধতা পাওয়ায় জাতীয় পার্টির এই নেতা এবারও মহাজোটের প্রতিনিধিত্ব করবেন। খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বগুড়ার পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমানও এ আসনে ধানের শীষের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়র পদ না ছেড়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় তা বাতিল করা হয়।
বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার বিকল্প প্রার্থী গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোরশেদ মিল্টনের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়েজ আহম্মদ জানান, মিল্টন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তা গৃহীত না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে মিল্টন চাইলে আপিল করতে পারবেন।
খালেদা জিয়া ও মিল্টনের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় বগুড়া-৭ আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী থাকল না।
জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বাদল দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় প্রত্যয়ন না থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তা বাতিল করে দেন। বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী এবারও এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের মোস্তফা আলম নান্নু মনোনয়নপত্র জমা দিলেও দলীয় প্রত্যয়ন না থাকায় তা বাতিল হয়ে গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, এ আসনে জমা পড়েছিল ১৪টি মনোনয়নপত্র, তার মধ্যে সাতটি বাতিল হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তার উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, বগুড়া-৬ ও ৭ আসন জিয়া পরিবারের। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এসব আসনে বিএনপির সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। এবারও দুটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের চেয়ারপারসন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।
কিন্তু চেয়ারপারসনকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার অনেক আগে থেকেই নানা ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশল চালিয়ে আসছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় দণ্ড দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে।
আইনজীবীদের কালো পতাকা মিছিল : সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনের সামনে রোববার জাতীয় যুব আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে শতাধিক আইনজীবী কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। যুব আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার এতে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন আইনজীবী আবেদ রাজা, মনির হোসেন, এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, ওয়াসিলুর রহমান বাবু, আরিফা জেসমিন নাহিন, ফারুক হোসেন, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, আনিছুর রহমান খান, আল মাহমুদ, কামাল হোসেন প্রমুখ। খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনে সব মামলা থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানান আইনজীবীরা।
আপিলের ঘোষণা : সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে রোববার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের মামলা থাকা সত্ত্বেও তাদের পদ অবৈধ হয়নি। আর বিএনপিসহ সরকার বিরোধীদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে আদালতের মাধ্যমে এই কৌশল নিয়েছে সরকার। আমরা খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করব, উচ্চ আদালতে যাব।