এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে একাধিক বিকল্প প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না বিএনপির। চার আসনে বিএনপির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বগুড়া-৭, ঢাকা-১, মানিকগঞ্জ-২ এবং জামালপুর-৪ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে টেকেনি। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে না পেলে এসব আসন বিএনপি প্রার্থীশূন্য থাকবে। বিভিন্ন আসনে বিএনপির ১০৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থীরা নানা জটিলতার মুখে পড়েছিলেন। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন কমিশনকে রোববার চিঠি দিয়েছেন।
একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের টেলিফোন করে দলীয় মনোনয়নসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে প্রার্থিতা রক্ষা করলেও উদ্বিগ্ন দলের হাইকমান্ড।
দলটির নীতিনির্ধারক কয়েক নেতা জানান, বিএনপির আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হল। নানা অজুহাত দেখিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত বহু নেতার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এ আশঙ্কা থেকে একাধিক বিকল্প প্রার্থী দিয়েও শেষ রক্ষা হল না। কয়েকটি আসনে প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়ল। আবার অনেক আসনে প্রধান যোগ্য প্রার্থী বাতিল হয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত তুলনামূলক দুর্বল নেতা প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকল।
এতে ভোটযুদ্ধে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থীর সংখ্যাও কমে গেল বিএনপির। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা চিন্তিত তারা।
বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের শেষ দিন রোববার বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দিনভর মনিটরিং করেছে। একই সঙ্গে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টেলিফোনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন।
শূন্য আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কাকে দলীয় সমর্থন দেয়া যায়- সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট যোগ্য ও সমমনা প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র জানায়, বাছাইতে বেশ কিছু আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম পূরণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরের অমিলসহ নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও জটিলতার খবর পায় বিএনপি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল নিজেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এবং নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকদের টেলিফোন করেন।
স্বাক্ষর অমিলের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করে তা গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে দ্রুত ঢাকা এসে তার কাছ থেকে আবার স্বাক্ষর ও মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র নেয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও কমিটির অন্যতম সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ অন্য সদস্যরাও টেলিফোন করে দলীয় প্রার্থী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করেন।
বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও দুইজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তারা হলেন শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোর্শেদ মিল্টন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় সরকার বাদল ও মোর্শেদ মিল্টনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
তবে মোর্শেদ মিল্টন বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই আমি পদত্যাগ করেছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র দিয়েছি। পদত্যাগপত্র গ্রহণের চিঠি দেখানোর পরও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমি আপিল করব।
ঢাকা-১ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাক ও সায়মা হোসেন জুবিলীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের স্বাক্ষরে মিল না থাকায় জুবিলীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আবু আশফাকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয় উপজেলা চেয়ারম্যান পদ না ছাড়ায়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী আবু আশফাক এখনও চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন।
মানিকগঞ্জ-২ আসনেও বিএনপির সব প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ আসনে দলটির কোনো বৈধ প্রার্থী নেই। দলীয় প্রত্যয়নপত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে মিল না থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। রোববার বিকালে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জের সাত প্রার্থীকে তিনিই মনোনয়নের প্রত্যয়ন দিয়েছেন। সবাই তার সুপরিচিত। তাই স্বাক্ষরে মিল না থাকার যুক্তি অবান্তর।
অধিকাংশ আসনেই বিএনপি একাধিক প্রার্থী দিলেও জামালপুর-৪ আসনে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী ছিলেন ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। বিএনপির সাবেক এমপি আনোরারুল কবির তালুকদারের ছেলে শামীম সরিষাবাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান। পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। শামীমের দাবি, তিনি ২৮ নভেম্বর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, বেছে বেছে বিএনপির জনপ্রিয় প্রতিনিধিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা একতরফা। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।