এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) একগাদা অভিযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপির প্রতীকে ভোটে অংশ নেয়া জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিসহ বেশ কিছু দাবি রেখেছে দলটি। এ ছাড়া সারা দেশে বিএনপির ও ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এসব দাবি ও অভিযোগ পেশ করে। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এর আগে কয়েকজন হতাহত হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ যুক্ত করে দিয়েছি।
যেহেতু আইনশৃঙ্খলা নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত তাই তাদের কাছে প্রতিকার চেয়েছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরাই আক্রান্ত হয়ে আসছে। আমরা কাউকে কখনো আক্রমণ করি না। মাঝে মাঝে বিএনপি কিংবা জামায়াতপন্থিরা উল্টো অভিযোগ করেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বিষয়টি তুলে ধরার আহ্বান জানান। সরকারের প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা ও মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন না বলে সাংবাদিকদের জানান এইচটি ইমাম। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরো বলেন, জামায়াতের প্রার্থীদের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে হাইকোর্ট। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। তারা হলফনামা এবং মনোনয়নে বলেছেন তারা কোন দলের সদস্য। তারা নিজেদের বিএনপি বলে পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তাদের ওয়েবসাইটে পত্রপত্রিকায় বলা হয়েছে তারা কে কোন পদধারী। কাজেই এমনিতেই মনোনয়ন বাতিল হওয়ার যোগ্য। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। আমরা তাদের প্রার্থিতা বাতিলের অনুরোধ করেছি ইসিকে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী পোস্টারে দলের বর্তমান সভাপতি ও প্রার্থীদের ছবি থাকার কথা। এখানে বঙ্গবন্ধুর ছবিও ব্যবহার করছেন না। কিন্তু বিএনপির পোস্টারে তারা খালেদা ও তারেক জিয়ার ছবি ছাপছেন। বর্তমান সভাপতি খালেদা জিয়া নন। তাদের মতে তারেক জিয়া বর্তমান সভাপতি। কিন্তু তিনি তো দ-িত ও পলাতক আসামি। একজন আসামির ছবি পোস্টারে ছাপানো সম্ভব কিনা বিষয়টিও তুলে ধরেছি ইসির কাছে। পর্যবেক্ষকদের প্রসঙ্গে এইচটি ইমাম বলেন, আমরা ১১৮টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে চারটি সংস্থা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। এগুলোর মধ্যে একটি হলো-ডেমোক্রেসি ওয়াচ। যার প্রধান হচ্ছে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমান। খান ফাউন্ডেশন ড. আবদুল মঈন খানের স্ত্রীর। বগুড়ার লাইট হাউজ তারেক রহমানের। আর আদিলুর রহমানের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ। এরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তাই নির্বাচন কমিশনকে আমরা বলেছি যেন, নিরপেক্ষ সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিতে। এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সম্প্রতি অধিকার নামে একটি সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এইচটি ইমাম বলেন, অধিকার সংগঠনটিই আদিলুর রহমানের। সেটির নিবন্ধন বাতিল হলে এখন সে বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ চালাচ্ছে। লাঠির ওপর ধানের শীষ নিয়ে প্রচার কাজের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদের দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, এতে যেকোনো ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে।
শুধু বিএনপি নয়, যে কোনো দলেরই নির্বাচনী প্রচারে লাঠি বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন বস্তুর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বারবার কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় আওয়ামী লীগের কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতা আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আস্থাহীনতা আছে বলে মনে করি না। নির্বাচন কমিশন আদালতের মতো। সেখানে বিচারকরা যেমন নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারে, এখানে কমিশনাররাও নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতই গ্রহণযোগ্য হবে।