এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনের আগে যেসব দল এবং জোট সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের নিয়ে ফের সংলাপে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিগগিরই এই সংলাপের জন্য দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে কবে নাগাদ এই সংলাপ শুরু হবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচিত ওই সংলাপে দলগুলো ব্যাপক আগ্রহ ও সাড়া দিয়েছিল। যদিও সংলাপের ফল নিয়ে দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সংলাপে আগের মতো অংশগ্রহণ থাকবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। আওয়ামী লীগের তরফে সংলাপের আগ্রহ প্রকাশের পর রোববার অবশ্য বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টের নেতারা অবশ্য আরেকটি নির্বাচনের ইস্যুকে সামনে এনেছেন।
এ ইস্যু ছাড়া তারা সংলাপে বসতে রাজি নন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আচমকা সংলাপের ঘোষণা দিয়ে রাজনীতিতে ইতিবাচক আশা জাগিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ১লা নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ কোনো ফল ছাড়াই শেষ হলেও দ্বিতীয় দফা ৭ই নভেম্বর আবার সংলাপে বসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। ওই সংলাপ থেকেও কোনো ফল পাননি বলে জানিয়েছিলেন নেতারা। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংলাপ সফল হয়েছে এবং ঐক্যফ্রন্টের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। সে সময় প্রায় সব নিবন্ধিত দল ও জোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেন। দল ও জোটগুলো নির্বাচন সামনে রেখে তাদের দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরে। ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি করেছে। পুনরায় নির্বাচন করতে আবারো সংলাপ দাবি করা হয় ফ্রন্টের পক্ষ থেকে। তবে তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঐক্যফ্রন্টের দাবিকে মামাবাড়ির আবদার বলে আখ্যায়িত করেন।
গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা এবং এর আশেপাশের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা পর্যায়ের দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের সঙ্গে যৌথ সভা শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের বার্তা দেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী শনিবার আমাদের সঙ্গে ওয়ার্কিং কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে, তাদের আবারো আমন্ত্রণ করবেন, আহ্বান করবেন, নিমন্ত্রণ করবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণভবনে সংলাপ হয়। যারা সংলাপে এসেছিলেন তাদের আবারো নেত্রী সংলাপের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে আমরাও সবাই একমত। আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কিছু মতবিনিময় করবেন এবং সেখানে নেতাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও থাকবে।
আমন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলই গণভবনে আমন্ত্রিত। ঐক্যফ্রন্ট আছে, যুক্তফ্রন্ট আছে, ১৪ দল আছে, জাতীয় পার্টি আছে, এ ছাড়া অন্য যেসব দল আছে, সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেছিলেন, তাদের আবারো চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর সেটা খুব শিগগিরই জানিয়ে দেয়া হবে। এ সময় আগামী উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তাতে আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিপক্ষকে আমরা কখনো দুর্বল মনে করি না। আর সেটা মনে করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সেদিক থেকে বিএনপি বা তাদের ফ্রন্ট নির্বাচনে যদি আসে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্বাগত জানাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনেরও আলাদা একটি মজা আছে। আমরা সেই রকম নির্বাচনই আশা করি।
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থী করা ‘ভুল’ ছিল কামাল হোসেনের এমন বক্তব্যের বিষয়ে কাদের বলেন, জেনে শুনে বিষ করেছি পান-বিষয়টি এমন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নেতারা একেক সময় একেক কথা বলেন, আর কামাল হোসেনের বক্তব্য এখানে আমরা স্ববিরোধী বলে মনে করছি। কেননা তিনি জেনে শুনেই তো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছেন। জামায়াত ছাড়া তো বিএনপির কোনো অস্তিত্ব নেই। বিএনপি মানেই জামায়াত, জামায়াত মানেই বিএনপি। এ অবস্থায় কামাল হোসেন সাহেব জেনে শুনে কেন এত বড় ভুল করলেন? এ ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে। সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ প্রমুখ।