এশিয়ান বাংলা, নোয়াখালী : সুবর্ণচরে গণধর্ষণের ঘটনার পর এবার কবিরহাট উপজেলায় ৩ সন্তানের জননী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শুক্রবার রাতে ৭ ব্যক্তি তার ঘরে ঢুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, এ সময় তার তিন সন্তানকে জিম্মি করে রাখা হয়। এ ঘটনায় গতকাল জাকের হোসেন
নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। এলাকাবাসী জানায়, সিঁধ কেটে শুক্রবার রাতে গৃহবধূর ঘরে ঢুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ৩ সন্তানসহ তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধর্ষণ করে ৭ ব্যক্তি। কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকার খুলনাওয়ালাগো বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ধর্ষিতার বরাত দিয়ে তার মামা জানান, রাত দেড়টার দিকে জাকির হোসেন জহির’সহ ৭ জন তার ভাগিনার ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় তারা গৃহবধূকে বলে- তোর কাছে ৬০ হাজার টাকা আছে, সেগুলো আমাদের দিয়ে দে।
এনিয়ে তাদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। পরে তারা ঘরের লাইট বন্ধ করে ধর্ষিতার মা (৬৫), এক ছেলে ও দুই মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তাদের মধ্যে তিন দুর্বৃত্ত গৃহবধূকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। পরে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ধর্ষকরা ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
এসময় তারা ঘরে থাকা নগদ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণ, মোবাইল ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এদিকে এই ঘটনার পর কয়েকজন দুর্বৃত্ত পার্শ্ববর্তী নূর নবীর ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ডুকে ঘরে থাকা লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩৪ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ঐ নারী বাদী হয়ে ধানশালিক ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি জাকির হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ধর্ষিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কবিরহাট থানা পুলিশ। পরে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই এলাকাবাসীর সহযোগিতায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জাকিরকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ হাসান জনি বলেন, আটক জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধর্ষিতা গৃহবধূ জানান, গভীর রাতে ঘরের সিঁদ কেটে ৭ জনের একদল পাষণ্ড ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে তার ছেলে ও মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। এ সময় তারা ঘরের আসবাবপত্রসহ সব কিছু লুট করে নিয়ে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন পূর্বে তার স্বামী আবুল হোসেনকে পুলিশ রাজনৈতিক দুই মামলায় ধরে নিয়ে যায় এবং বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। ধর্ষণকারীরা তার স্বামীকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ৫০ হাজার টাকাও দাবি করে বলে “আমরা পুলিশের লোক”। সকালে ঘটনাটি বাড়ির লোকজন টের পেয়ে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানায় এবং পরে পুলিশকে খবর দেয়। পরে সকালে ধর্ষিতা থানায় গিয়ে বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা করে।
এ বিষয়ে কবিরহাট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মির্জা মো. হাছান বলেন, ধর্ষণের কথা জানিয়ে দুপুরে এক গৃহবধূ থানায় এসে অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার রাতে একই এলাকার জাকের হোসেনসহ তিন ব্যক্তি ওই গৃহবধূর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। গৃহবধূর অভিযোগ পাওয়ার পরই অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনকে (২৮)-কে আটক করেছে পুলিশ। ওসি আরও বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে নোয়াখালী কারাগারে আছেন। বাড়িতে স্বামী না থাকার সুযোগে ওই ব্যক্তিরা ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এর মধ্যে জাকির হোসেনকে চিনতে পেরেছেন গৃহবধূ পারভীন। এঘটনায় ভিকটিম একজনের নাম এজাহারভুক্ত করে আরোও ৩জনকে অজ্ঞাতনামা করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ওই নারীকে বিকাল ৩টায় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গৃহবধূর স্বামী পেশায় একজন রাজ মিস্ত্রী।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে সুবর্ণচরের এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়।