এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিলেই যে, তারা ভালো হয়ে যাবে- তা নয়। বরং তাদের সমাজের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারাটাও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে একটা মাদকাসক্ত আছে, সে পরিবারের যে কী কষ্ট, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। সে কারণে অভিযানটাকে আমাদের আরো ব্যাপকভাবে পরিচালনা করে যেতে হবে। এক্ষেত্রে মাদকাসক্তির খারাপ দিকটি মানুষের সামনে তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সমাজের সব স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে প্রচার চালাতে হবে। এদিকে নতুন বছরের শুরুতে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়।
পরে কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি আকার পেতে শুরু করে।
এরই মধ্যে আত্মসমর্পণে সম্মত হয়ে শতাধিক তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী কক্সবাজার শহরের কোনো এক স্থানে জড়ো হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আগামী ৩০শে জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে পারে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে অপরাধী আবার অপরাধের জীবনে ফিরে যায় মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযান, সেটা অব্যাহত থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে মাদকমুক্ত করা, মাদক কারা আনে, পাচারকারী, কারা সেবন করে- এখানে কিন্তু বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা সুস্থভাবে সমাজে ফিরে আসতে চাইবে, সংসারে ফিরে আসতে চাইবে, তাদেরকেও সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদককে সমাজের ‘কালো ব্যাধি’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় এটাই চাই, এই সমস্ত কালো ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করা। তার জন্য যা যা করণীয় সেটা আমাদের করতে হবে।
কারণ একটা দেশকে যদি আমরা উন্নত করতে চাই, তাহলে এই সমস্ত মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি মনে করি এই মন্ত্রণালয়ে যারা কাজ করে সবাইকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। এদিকে ২০১৬ সালের ১লা জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ্যেই স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, ইমাম, ধর্মগুরুসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়। ওই প্রসঙ্গ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে এক করে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই কিন্তু এই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এই বিষয়গুলো আমার মনে হয় অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এত ঘন বসতির দেশেও দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। এটা খুব একটা কঠিন কাজ এবং সেটা আমরা করতে পেরেছি। এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
মাদক, জঙ্গিবাদের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিও একটা কালো ব্যাধি। এটা সমাজের উন্নয়ন যথেষ্ট ব্যাহত করে। সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে এবং দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের জন্য অতীতের সরকারগুলোকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশেই মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় আসে, তারা প্রথমেই সমাজটাকে ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিটাকে তারা নীতি হিসেবে নেয় এবং সুযোগও সৃষ্টি করে দেয়। ঋণখেলাপি থেকে শুরু করে যা কিছু বাংলাদেশে আমরা দেখি, তার গোড়াপত্তন কিন্তু ৭৫-এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারাই সৃষ্টি করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। সেটা ধরে রেখে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধীরে ধীরে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আর উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে খুব স্বাভাবিক মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা এবং আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে যথাযথভাবে কার্যকর হয় সে ব্যবস্থা করা। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।