বরগুনায় শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ নামে এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ. মারুফ হোসেন একথা জানান।
মঙ্গলবার প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে পুলিশ কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর রাতে গ্রেপ্তারের এই তথ্য জানানো হয়। যদিও ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় তার স্ত্রীকে এক নম্বর সাক্ষী করা হয়েছিল।
বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ. মারুফ হোসেন জানান, তদন্তের পর ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে ‘মিন্নির সংশ্লিষ্টতার’ তথ্য পেয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মারুফ হোসেন বলেন, ”এ পর্যন্ত আমরা যা পেয়েছি, সার্বিক তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।”
গত ২৬ জুন বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাতকে (২৩) তার স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল লোক। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আক্রমণকারীদের একজন, যিনি এলাকায় নয়ন বন্ড নামে পরিচিতি, পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশের ভাষায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তার মৃত্যু হয় ।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য ১০ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখনো রিমান্ডে রয়েছে তিনজন। কিন্তু নিজের স্বামী হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত রয়েছে- এ সন্দেহ কেন পুলিশের মধ্যে তৈরি হলো?
পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলছেন, ”আমরা তাকে মঙ্গলবার সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। পাশাপাশি যেসব আসামীদের রিমান্ডে আনা হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, সেই তথ্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যেসব তথ্য প্রমাণ পেয়েছি, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের মনে হয়েছে যে, তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।”
এর আগে গত শনিবার নিহত রিফাত শরীফের বাবা একটি সংবাদ সম্মেলন করে পুত্রবধূ মিন্নির গ্রেফতার দাবি করেন। সেখানে তিনি ওই হত্যাকাণ্ডে তার পুত্রবধূ জড়িত বলে অভিযোগ করেছিলেন।
পরদিন একই দাবিতে বরগুনায় একটি মানববন্ধনও হয়। সেদিন দুপুরে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন বলেন, যারা বরগুনায় ‘০০৭’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করেছিল, তারাই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার শ্বশুরকে চাপ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।
তবে মারুফ হোসেন এই প্রসঙ্গে বলছেন, ”দেখুন সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি, মিডিয়া যাই হোক না কেন-আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে যতটুকু করা দরকার, আমরা সেই বিষয়টা নিয়ে আমাদের পর্যালোচনা করে, বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মিন্নি সংবাদ সম্মেলনে প্রভাবশালী মহলের উল্লেখ করেছিলেন, যারা তাকে দোষী হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে। তবে পুলিশ সুপার বলছেন, ”সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে, আসামীদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তদন্ত স্বাধীন নিরপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া, এখানে কে কী বললো সেটা কোন বিষয় নয়।”
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নিরাপত্তার কারণে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তদন্তের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনার পুলিশ সুপার। বিবিসি বাংলা।