এরশাদ ছিলেন ‘পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনা অফিসার’। অর্থাৎ তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তার আমলের দুই প্রধানমন্ত্রী (কাজী জাফর ও মওদুদ আহমদও ছিলেন কিছুদিন) মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আতাউর রহমান খান দুই কারণে বিখ্যাত হয়ে আছেন। এই দুইজনই এরশাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন। মিজানুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালের শুরুতে এরশাদ ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। রংপুর হয়ে তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান। ১৯৭১ এর মার্চ এপ্রিলের পর পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছিলেন এবং যারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে সহায়তা করতে রাজি হননি তারা (পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিদ্রোহী বাঙালি সৈনিক ও অফিসাররা) গ্রেফতার হচ্ছিলেন। সামরিক আদালতে এদের বিচার শুরু হয়। মিজানুর রহমান চৌধুরীর মতো অনেকেই বলেছেন এবং লিখেছেন এরশাদ সাহেব এই সামরিক বিচার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৬৯ সালে এরশাদ লে. কর্নেল পদে প্রমোশন পেয়েছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এরশাদের সামরিক জীবন নিয়ে আলোচনা হয়েছে খুবই কম। এককথায় সামরিক বাহিনীতে বিভাজন, মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের চাকরিচ্যুতি, কমান্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া, অসম্মানজনক পোস্টিং, জেনারেল জিয়া ও মঞ্জুর হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তেরো জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের ফাঁসির ঘটনায় এরশাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। এরশাদকে অনেকেই ‘ষড়যন্ত্রের মূলহোতা’ বলে সন্দেহ করেছেন। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর নির্মোহভাবে খুঁজতে হবে এই প্রজন্মকে, সেগুলো হলো—
ক. মুক্তিযুদ্ধে চরম বিতর্কিত ভূমিকা পালন করার পরেও কেন তাকে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল? কার অনুরোধ বা সুপারিশে? মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক বা অফিসাররা তখন কি বিরোধিতা করেছিলেন? কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন যে পাকিস্তান প্রত্যাগত এরশাদের চাকরির জন্য সুপারিশ করা অন্যতম ব্যক্তির নাম নাজিউর রহমান মঞ্জু। যিনি এরশাদের দলে ছিলেন আবার দল ভেঙে খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন।
খ. ১৯৭৪ সালে ভারতের একটি প্রশিক্ষণে পাঠানো হয় এরশাদকে। কার ইশারায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের একদিন আগে তিনি দেশে ফিরেছিলেন? আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ‘১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ বইয়ে লিখেছেন, ‘এরশাদ ১৯৭৪ সালে ভারতে গিয়েছিলেন এনডিসি (ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ) কোর্স করতে। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি দু’বার পদোন্নতি পেয়ে (লে. কর্নেল থেকে কর্নেল ও কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার) সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশে ফেরত আসেন ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে। ১৯৭৪ সাল থেকেই তিনি এবং তার কয়েকজন সহযোগী পাকিস্তান স্টাইলে ‘ক্যু’ করার মতলব এঁটে আসছিলেন। এজন্য খুব নীরবে তারা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদ দখল করছিলেন। পাকিস্তানি সেনাশাসক আইয়ুব খান ১৯৫১ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত যেভাবে নিজ বলয়ের সেনা কর্মকর্তাদের একের পর এক নানা ধরনের কোর্স বা ট্রেনিং করিয়ে সব ধরনের নিয়ন্ত্রিত-পকেটগুলোতে তাদের পোস্টিং দিয়ে তারপর ‘ক্যু’ করেছিলেন, এরশাদও ঠিক একইভাবে জেনারেল জিয়াকে গুড হিউমারে রেখে তার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সব জায়গায় নিজের লোকদের বসান। এরপর জিয়ার বিরুদ্ধে ‘ক্যু’ সংঘটিত করেন। এই ‘ক্যু’র সঙ্গে মঞ্জুর কতটা জড়িত, প্রমাণিত নয়। এরশাদ এক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা রাখেন। আত্মসমর্পণের পর সেনা হেফাজতে মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার নির্বাচিত হওয়ার পরও তার কেবিনেটকে অযোগ্য ঘোষণা করে এরশাদ মার্শাল ল’ ঘোষণা করেন। মেজর জেনারেল মান্নাফ, মেজর জেনারেল আবদুস সামাদসহ আর ওকয়েকজন এর প্রতিবাদ করেছিলাম। তিনি তা মানেননি।’
ভবিষ্যতে কি কোনোদিন অবৈধ ক্ষমতা দখল, জিয়াউর রহমান ও মঞ্জুর হত্যার জন্য এরশাদ সাহেব মরণোত্তর বিচারের সম্মুখীন হবেন?
গ. ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ বইয়ে লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি লিখেছেন, ‘ধূর্ত এরশাদ। চানক্যের কূটকৌশল প্রয়োগ করে জিয়ার সঙ্গে মঞ্জুর (মেজর জেনারেল মঞ্জুর) শওকতের (লে.জেনারেল মীর শওকত) সম্পর্কে ফাটল ধরালো। […] সেনাপ্রধান এরশাদের চক্রান্তে হঠাৎ করে জিয়া ও মঞ্জুরের সম্পর্ক চরম আকার ধারণ করে। মঞ্জুর আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তিনি জিয়াকে হত্যা করার প্ল্যান করেছিলেন কিনা, এ নিয়ে গভীর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। জিয়াকে বন্দি করে ক্যান্টনমেন্টে এনে এরশাদের পদচ্যুতিসহ কিছু দাবি দাওয়া আদায়ই ছিল মূল উদ্দেশ্য।’
জিয়াউর রহমান নিহত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ৩০ মে ১৯৮১ সালে, ভোর ৪-৩০ মিনিটে। এটি কোনও সাধারণ সৈনিকদের অংশগ্রহণে ‘ক্যু’ ছিল না, ছিল সেনা অফিসারদের পরিচালিত আকস্মিক কমান্ডো অভিযান। প্রায় বিনা বাধায় অফিসাররা রকেট লাঞ্চার মেরে ও মেশিন গানের গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়েছিল সার্কিট হাউসে। তারা খুঁজছিল প্রেসিডেন্ট জিয়া কোথায় আছেন। চার নম্বর রুম থেকে বেরিয়ে জিয়া নিজেই জানতে চেয়েছিলেন তোমরা কী চাও? ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ বইয়ে লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি আরও লিখেছেন, ‘(জিয়ার কাছে দাঁড়ানো) লে. মোসলেহউদ্দীন রীতিমতো ঘাবড়ে যান। এমন সময় লে. কর্নেল মতি ছুটে এসে তার স্টেনগান দিয়ে অতি কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ওপর সরাসরি গুলি বর্ষণ করেন। ক্ষিপ্তপ্রায় মতি তার স্টেনগান থেকে মেঝেতে পড়ে যাওয়া জিয়ার মুখমণ্ডলে আরও এক ঝাঁক গুলি বর্ষণ করেন। […] রাষ্ট্রপতি জিয়াকে যেভাবে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেরকম নির্দেশ জেনারেল মঞ্জুর কোনও পর্যায়ে কাউকে দিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নেপথ্য থেকে তাহলে নাটাইয়ের সূতাটি টেনেছিল কে?’
লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি আরও লিখেছেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ থেকে জানা যায় জিয়া হত্যাকাণ্ডের চারদিন আগে চট্টগ্রামে মতির সঙ্গে হিলপট মেসে এরশাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলোচনা হয়েছিল। সব প্রটোকলের বাইরে জুনিয়র মতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের এমন কী গোপন আলাপ থাকতে পারে ওই সন্ধিক্ষণে? কিছুদিন আগে ঢাকায় গিয়েও মতি সেনাপ্রধান এরশাদের সঙ্গে দেখা করে। ওই দিন এরশাদ মিলিটারি অ্যাকাডেমির নির্ধারিত ভিজিট ক্যানসেল করে প্রায় সারাদিন মতির সঙ্গে গভীর আলোচনায় লিপ্ত হয়েছিলেন।’
তাদের মধ্যে কী গোপন আলোচনা হয়েছিল? এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা খুব জরুরি!
ঘ. জেনারেল মঞ্জুর হত্যার আসামি ছিলেন জেনারেল এরশাদ। কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল জেনারেল মঞ্জুরকে? কার নির্দেশে কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল? একাধিক সেনা কর্মকর্তার লেখা এবং পরবর্তীকালে দুইটি দৈনিকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এরশাদের নির্দেশেই এক চা বাগানের কুলির বাসা থেকে মেজর জেনারেল মঞ্জুর,তার স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর নিয়ে আসা হয় হাটহাজারি থানায়। থানার ওসি পুলিশ ইনস্পেক্টর গোলাম কুদ্দুসকে জেনারেল মঞ্জুর বারবার অনুরোধ করছিলেন তাকে যেন পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। গোলাম কুদ্দুস (পরবর্তীকালে ব্যবসায়ী এবং বিজেএমইএ এর নেতা) মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী এই জেনারেলের কথা শোনেননি, শুনেছিলেন এরশাদের কথা। তিনি জেনারেল মঞ্জুরকে একা তুলে দিয়েছিলেন এরশাদের নির্দেশ মোতাবেক ক্যাপ্টেন এমদাদের কাছে। বন্দি জেনারেলকে কী চট্টগ্রাম সেনানিবাসের কোনও এক অফিসার্স মেসের সামনের ড্রেনে মাথায় বালিশ দিয়ে (শব্দ যেন কম শোনা যায়?) একটি মাত্র গুলি করে হত্যা করা হয়?
অনেকেই জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখেছেন। ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ বইয়ে লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি লিখেছেন, ‘সেনাবাহিনীর বরপুত্র চট্টগ্রামের একচ্ছত্র সেনাপতি মেজর জেনারেল মঞ্জুর তার আপন সেনানিবাসে প্রবেশ করলেন দিনহীন বন্দি বেশে।তার হাত-পা-চোখ বাঁধা। ক্ষমতার মসনদে সদ্য উপবিষ্ট নবাবের ইঙ্গিতে ঘাতকরা তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। রাতের অন্ধকারে তাকে নিয়ে ক্যাপ্টেন এমদাদের দল সেনানিবাসে ঘুরতে থাকে। জনপ্রিয় জেনারেলকে কেউ খুন করতে রাজি হয় না। একসময় ঘাতক দল কঠোর হয়। ওপরের নির্দেশ পালন করতেই হবে। অতি নিকট থেকে জেনারেল মঞ্জুরের মাথায় একটি মাত্র গুলি করা হলো। গুলিটি তার মাথায় একটি বড় গর্তের সৃষ্টি করলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন। সরকারের রেডিও টেলিভিশন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে ঘোষণা করলো-চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একদল উচ্ছৃঙ্খল সৈন্যের হাতে জেনারেল মঞ্জুর নিহত হয়েছেন। কী নির্লজ্জ মিথ্যাচার!’
ঙ. এরপর? এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের সঙ্গে এরশাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং ১৫ আগস্টের আগে তিনি দেশে এসেছিলেন। ঘাতকদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিতে বহাল রাখার পেছনে এরশাদের অনস্বীকার্য অবদান ছিল। এরপর জিয়াকে খুশি রেখে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিজের লোকদের বসিয়ে (প্রধানত, পাকিস্তান প্রত্যাগত অফিসারদের বসান। শুরুটা করেছিলেন জিয়াউর রহমান নিজেই) পাকিস্তানি জেনারেল আইয়ুব খানের মতো এরশাদ ‘ক্যু’-এর সব পথ পরিষ্কার করেন এবং জিয়াউর রহমান নিহত হন। জেনারেল মঞ্জুর যে রাতে নিহত হন সে রাতে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুল হাসান, এম এ লতিফ ও আজিজুল ইসলাম সশরীরের উপস্থিত ছিলেন। পরে বিগ্রেডিয়ার আজিজ মারা যান,বাকি দুজন প্রমোশন পান। জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর মেজর জেনারেল মোজাম্মেলের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন হয় এবং জেনারেল আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে এক গোপন কোর্ট মার্শালে ১৩জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে তড়িঘড়ি করে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানো হয়। জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এই ১৩ জন অফিসারের ফাঁসি প্রসঙ্গে এম এ হামিদের মন্তব্য, ‘তাদের পরিবার পরিজনের আকুল আবেদন, কাকুতি, মিনতি, অনশন কিছুই এরশাদের ইস্পাত কঠিন হৃদয়কে টলাতে পারলো না। তারা জীবিত থাকলে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসতো। বেরিয়ে আসতো নেপথ্য নায়কের বিভৎস চেহারা। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত অনেকেই জিয়া হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। চট্টগ্রামের বিদ্রোহ বাহ্যত, একটি বিশেষ গ্রুপের (মুক্তিযোদ্ধা অফিসার গ্রুপ) অফিসারদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মঞ্জুর বরাবরই জেনারেল এরশাদকে তার দুর্নীতি ও নষ্ট চরিত্রের জন্য প্রকাশ্যেই ঘৃণা করতেন। এরশাদ ভালোভাবেই জানতেন জিয়ার মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করলেও জীবিত মঞ্জুরের উপস্থিতিতে কোনোভাবেই তিনি নিশ্চিন্ত মনে দেশ শাসন করতে পারবেন না। অতএব ভালো করে হিসাবনিকাশ করেই এক ঢিলে দুই পাখি মারার আয়োজন করা হয়। সাত নভেম্বরে সিপাহী বিদ্রোহের পথ ধরে জিয়ার উত্থানের আড়ালে যে বহুরূপী কালো বিড়ালটি (লেখক এরশাদ সাহেবকেই ইঙ্গিত করেছেন) ম্যাও ম্যাও করে সবার অলক্ষ্যে সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে সেনা সদর দফতরে প্রবেশ করে ,পরবর্তী সময়ে তার অশুভ পদচারণায় সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সুদূরপ্রবাসী বিপর্যয় ডেকে আনে। এর জের আজও চলছে। চলবে আরও বহুদিন!’
হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন, ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’। আমীন আহম্মেদ চৌধুরী লিখেছেন, ‘ক্ষমতা দখলের পর ‘হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরি’ এরশাদ তার এক আত্মীয়কে দিয়ে দিতে বলেন। আমীন আহম্মেদ চৌধুরীর উত্তর ছিল, ট্রাস্টির সম্পত্তি অন্য কাউকে অর্পণ করা সম্ভব না! মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর দমনপীড়ন নিয়ে প্রশ্ন তুললে এরশাদ মৌখিকভাবে চৌধুরী সাহেবকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন যদিও অফিশিয়ালি সেটা করা সম্ভব হয়নি। এরশাদের সামরিক সচিব মে.জেনারেল (অব.) মনজুর রশীদ খান তার বইয়ে (আমার সৈনিক জীবন: পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ) লিখেছেন, ‘১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগের আগে আবারও সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন এরশাদ। শত মানুষের মৃত্যু, স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সবচেয়ে বড় গণ অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীকে ফুঁসে ওঠা মানুষের মুখোমুখি করে দেওয়ার এই ঘৃণ্য সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনী মেনে নেয়নি বলেই এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।’
এরশাদকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ‘সমালোচনামূলক লেখা’ লেখা হয়েছে। তার মুখোশ উম্মোচন করা জরুরি।