ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ একমাত্র রাজ্য কাশ্মির ভ্রমণে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের উৎসাহিত করছে দেশটির সরকার। গত জানুয়ারিতে কুম্ভ মেলায় বিপুল ব্যয়ের পর এবার কাশ্মিরের পার্বত্য এলাকায় অমরনাথ যাত্রার প্রস্তুতিতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে দেশটি। গত ১ জুলাই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র একটি গুহায় ছয় সপ্তাহের এই তীর্থযাত্রা শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে ‘তীর্থযাত্রা পর্যটন’-এর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকার।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কাশ্মির নিয়ে দুইবার যুদ্ধে জড়িয়েছে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। গত ফেব্রুয়ারিতে তীর্থযাত্রা পথের কাছে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িবহরের ওপর পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীর আত্মঘাতী হামলার জেরে তৃতীয় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় দুই দেশ। এছাড়া ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বাসিন্দাদের অনেকেই দিল্লির শাসন অবসানের দাবিতে সেখানে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত জানুয়ারিতে কাশ্মিরে আয়োজিত কুম্ভ মেলা আয়োজনে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করে ভারত। ওই মেলায় লাখ লাখ হিন্দু ধর্মালম্বী গঙ্গার পানিতে স্নানে অংশ নেয়। তারা এই নদীর পানিকে পবিত্র বলে বিশ্বাস করে থাকে।
আর গত ১ জুলাই থেকে কাশ্মিরের পাহালগাম এলাকায় শুরু হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত অমরনাথ গুহা প্রায় সারা বছরই তুষারে ঢাকা থাকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এই গুহায় দেবতা শিবের শারিরীক উপস্থিতি রয়েছে। ছয় সপ্তাহের জন্য ওই গুহা তীর্থ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এবারের এই তীর্থ যাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতিতে রেকর্ড পরিমাণ ৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে রাজ্য প্রশাসন।
” onclick=”return false;” href=”http://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2019/07/28/f7fdd722db1c6182d4076b0492a0d2af-5d3d8b6431f0f.jpg” title=”” id=”media_1″ class=”jw_media_holder media_image jwMediaContent aligncenter”>
অমরনাথ গুহায় যাত্রা পথ প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। তুষার আর হিমবাহে ঢাকা এই যাত্রাপথ এতটাই বিপজ্জনক যে এই বছরে ভ্রমণ করা তিন লাখ তীর্থযাত্রীর প্রতি চার জনের এক জনেরই চিকিৎসার প্রয়োজন পড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাইপারটেনশন ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৪ তীর্থযাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা থেকে যাত্রা পথ নিরাপদ রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০ হাজার সদস্য। আর এই পথের তুষার পরিষ্কার রাখতে কাজ করেছে কাশ্মিরের মুসলমান গ্রামবাসীরা। অমরনাথ মন্দির বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান নির্বাহী অনুপ কুমার সোনি বলেন, এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যথাযথ উদাহরণ।
কাশ্মিরের হাজার হাজার গ্রামবাসী যাত্রাপথ পরিষ্কার করার পাশাপাশি অনেকেই তীর্থযাত্রীদের ঘুমানোর প্রয়োজনে বাড়ি ও তাঁবু ভাড়া দিয়েছেন। অভিনব নামে এক হিন্দু তীর্থযাত্রী বলেন, ‘এখানকার প্রত্যেকে সবসময়েই বন্ধুত্বপরায়ণ, কোনও সংঘাত নেই এখানে’।
অতীতে বেশ কয়েকবারই সশস্ত্র গোষ্ঠীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে অমরনাথের তীর্থযাত্রীরা। সর্বশেষ ২০১৭ সালে এক হামলায় আট তীর্থযাত্রী নিহত হয়। এ বছর সরকার একটি বার কোডিং সিস্টেম চালু করেছে। এর মাধ্যমে শুধু নিবন্ধনকৃত তীর্থযাত্রীরাই ওই যাত্রাপথে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে।
পাহালগামের অনেক পরিবারের জন্য একমাত্র উপার্জন বলে বিবেচিত হয় অমরনাথ তীর্থযাত্রা। ফিরোজ আহমেদ ওয়ানি নামে সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে কোনও বেসরকারি খাত নেই। সেকারণে অনেক শিক্ষিত তরুণ এবং অন্য কাশ্মিরিরা এই যাত্রার ওপর নির্ভর করে। আমরা সাধারণ মানুষ। এখানকার সংঘাতের বিষয়ে রাজনৈতিক নেতারা বিবেচনা করবেন’।