এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের একটা না একটা কেলেংকারি ফাঁস হয়ে চলেছে। নারী কেলেংকারি, বেফাঁস মন্তব্য, মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, ক্ষমতায় আসতে রাশিয়ার সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগসহ বিভিন্ন ঘটনায় ‘নায়ক’ থেকে খলনায়কে পরিণত হয়েছেন ট্রাম্প। মুখ পুড়েছে তার প্রশাসনেরও। এর মধ্যে সর্বশেষ বুধবার হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র কর্মকর্তার নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা বেনামি উপ-সম্পাদকীয় কেলেংকারি ফাঁসের বিষয়টিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত ২০ মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে ফাঁস হওয়া কেলেংকারিগুলো যেন ট্রাম্পের ‘গলার ফাঁস’ হয়ে ঝুলছে। আলজারিরার শনিবারের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ছয়টি তথ্য ফাঁসের ঘটনা উঠে এসেছে।
রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাইকেল ফ্লিনের বৈঠক : প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এক মাসেরও কম সময়ে মধ্যে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প। বরখাস্তের কারণ রুশ সংযোগ নিয়ে বিতর্ক। ফ্লিনের বিরুদ্ধে অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে অন্যায়ভাবে যোগাযোগ করার অভিযোগ ওঠে। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে ফাঁস হয়, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের আগে ফ্লিন টেলিফোনে আমেরিকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু ওই কথোপকথনের সব তথ্য হোয়াইট হাউসকে তিনি জানাননি।
আফ্রিকাকে ‘নোংরা দেশ’ বলে গালি : ট্রাম্পের ফাঁস হওয়া অন্যতম একটি ঘটনা হল অভিবাসীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল। অভিবাসী আইন নিয়ে হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক দলের সদস্যদের নিয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ট্রাম্প নোংরা মন্তব্য করেন, যা গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘ওসব নোংরা দেশের অভিবাসীদের কেন এখানে দরকার?’ ওই বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মতে, ট্রাম্প আফ্রিকা, এল সালভেদর ও হাইতিকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেন।
ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি বইতে হোয়াইট হাউসের গোমড় ফাঁস : ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে গত দুই বছরে বিভিন্ন বিস্ফোরক বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের হাঁড়ির খবর নিয়ে বই প্রকাশ করে রীতিমতো ঝড় তোলেন লেখক মাইকেল উলফ। লেখক ট্রাম্পের ঘনিষ্টজনদের বিভিন্ন বক্তব্য ও কথোপকথন এই বইয়ের মাধ্যমে ফাঁস করেছিলেন। এই বইয়ের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া তথ্যের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন ট্রাম্প ও তার প্রশাসন।
মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ : ২০১৭ সালের আগস্টে ওয়াশিংটন পোস্ট ট্রাম্পের দুটি আলাদা কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ করে যেখানে ট্রাম্প মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার সরকারপ্রধানদের সঙ্গে অসভ্য ভাষায় কথা বলেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতোকে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য মেক্সিকোকেই অর্থ দিতে হবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি। জবাবে নিয়েতো তা অস্বীকার করলে ট্রাম্প তাকে ধমক দেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টার্নবুলের সঙ্গেও অভিবাসী আইন নিয়ে টেলিফোন আলাপে রূঢ় আচরণ করেছিলেন তিনি। কথোপকথনের একপর্যায়ে ধপ করে ফোন রেখে দেন।
জেমস কমিকে বহিষ্কার : ২০১৭ সালের মে মাসে ট্রাম্প এফবিআই পরিচালক জেমস কমিকে বহিষ্কার করেন। নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ যোগাযোগ নিয়ে তদন্ত করছিলেন তিনি। এর কিছুদিন পরেই ফাঁস হয়, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের বিরুদ্ধে তদন্ত থামাতে কমিকে অনুরোধ করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প-কিম বৈঠকের তথ্য প্রকাশ : ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন তথ্য হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারাই শুধু ফাঁস করেননি। ট্রাম্প নিজেই বুঝে-না বুঝে বিভিন্ন স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জন উনের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার আগেই স্পর্শকাতর এ তথ্যটি টুইটারে প্রকাশ করে দেন ট্রাম্প।