এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : রাজাপাকসেকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে টানা ২ সপ্তাহ ধরে একের পর কৌশল খাটিয়ে চলেছেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তবে সহজে ছাড়ার পাত্র নন বরখাস্ত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে (৭২)। দাঁতে দাঁত চেপে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন আঁকড়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন তিনি। প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার পদক্ষেপকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিল তার দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)।
শনিবার এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে দলের শীর্ষ নেতা ও বিক্রমাসিংহে মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ডাকার সিদ্ধান্ত বেআইনি ও সংবিধান লঙ্ঘন। তিনি জানান, এর বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জানাবে তাদের দল। আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিমকোর্টে মামলা করবে ইউএনপি। সেই সঙ্গে আগাম নির্বাচনেও অংশ নেবে দল। সামারাবিরা বলেন, ‘একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছেন প্রেসিডেন্ট। সংবিধানকে চিবিয়ে খাচ্ছেন তিনি। এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব আমরা। আমরা আদালতেও লড়ব, সেই সঙ্গে পার্লামেন্টেও।’
টানা ১৫ দিন ধরে হম্বিতম্বি ও শক্তি প্রদর্শনের পর অবশেষে শুক্রবার দুপুরে সিরিসেনার দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম পার্টি (ইউপিএফএ) স্বীকার করে, ১৪ নভেম্বরের পার্লামেন্ট অধিবেশনে আস্থা ভোটে জিততে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছেন না মাহিন্দা রাজাপাকসে। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে ১১৩ এমপির ভোট দরকার। ইউপিএফএর মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা জানান, নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌঁছতে রাজাপাকসের এখনও ৮টি ভোট প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের ১০৪ বা ১০৫ এমপি রয়েছেন।’
এ স্বীকারোক্তির পর ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা দেখা দেয় পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বিক্রমাসিংহের। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরই সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দেন সিরিসেনা। অধিবেশনের মাত্র ৫ দিন আগে শুক্রবার মাঝরাতে ভেঙে দেন পার্লামেন্ট। ঘোষণা করেন আগাম নির্বাচনের তারিখ। পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে এক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন সিরিসেনা। এর ২ ঘণ্টা পর ৫ জানুয়ারি আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন তিনি। নির্বাচনের পর ১৭ জানুয়ারি নতুন পার্লামেন্ট বসবে বলেও জানান তিনি।
২৬ অক্টোবর বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করে রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন সিরিসেনা। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেন পার্লামেন্ট। ২ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে নিজের প্রধানমন্ত্রী দাবি অব্যাহত রেখেছেন বিক্রমাসিংহে। সেই সঙ্গে দখলে রেখেছেন কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন।
কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা প্রমাণে বারবার অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানালেও তা অস্বীকার করেন প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যে ১৪ নভেম্বর অধিবেশনের ডাক দিয়ে রাজাপাকসের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে দল ভারি করতে চেষ্টা করেন। অঢেল টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করেন বিরোধী দলের এমপিদের। গত সপ্তাহে কয়েকজন এমপি দাবি করেছেন, একেকজনকে আড়াই থেকে পাঁচ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।
এদিকে পার্লামেন্ট ভাঙার সিদ্ধান্ত পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সিরিসেনার সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ আরও কয়েকটি দেশ। মার্কিন ব্যুরো অব সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স শনিবার এক টুইটার বার্তায় বলেছে, ‘শ্রীলংকার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার খবরে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র।’ ব্রিটেনের স্টেট ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ডও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফিল্ড বলেন, ‘শ্রীলংকার অন্যতম বন্ধু হিসেবে দেশটির সবগুলো দলকে সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাজ্য।’ এছাড়া কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়েছে।