এশিয়ান বাংলা, রাজশাহী : আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত না করে বিএনপি নির্বাচনে যাবেন না। বিএনপি কোনো নীলনকশার নির্বাচনে অংশ নেবে না। রোববার বিকালে নগরীর ভুবন মোহন পার্কে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। বিএনপি ও দেশের জনগণ ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের নির্বাচন হতে দেবে না।
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, দেশের জনগণ জানে, সরকারও জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। বিএনপির জনপ্রিয়তা টের পেয়ে সরকার দলের নেতাকর্মীদের সারা দেশে কোনো নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। প্রশাসন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দেশের সর্বত্রই বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বন্দি রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের লোকেরা শেয়ারবাজার থেকে লাখো কোটি টাকা লুট করে ছোট্ট ছোট্ট বিনিয়োগকারীদের সর্বস্ব নিয়ে গেছে। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে আÍহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এই সরকারের আমলে ব্যাংক লুট হচ্ছে অভিনব কায়দায়। দেশের জনগণ সবকিছু দেখছে। তারা সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে। জুলুমবাজ সরকারকে কঠোর জবাব দেবে তারা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশে খোলাখুলি দুর্নীতি হচ্ছে। কোনো রাখঢাক নেই। যে যেখানে যেমন করে পারছে দুর্নীতি করে, লুট করে হাতিয়ে নিচ্ছে দেশের সম্পদ। জনগণের সম্পদ। এর জবাব একদিন তাদের পেতেই হবে। কাউকে বিচার ছাড়া যেতে দেয়া হবে না। সরকারের জনপ্রিয়তা যে একটুও নেই সেটা কিন্তু প্রমাণ হয়েছে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে সেসব মামলা ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের আমলের। একই সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার শেখ হাসিনার মামলাগুলো তুলে নিলেও খালেদা জিয়ার মামলাগুলো রেখে দিয়েছে শুধু হয়রানি করার জন্য। জনগণ এসব ঠিকই বোঝে। তারা একদিন সুদে-আসলে এর হিসাব আদায় করে ছাড়বে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি এরশাদের বুটের তলা থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছিল। সেই বিএনপি এবার শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে। ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে পারেনি। শেখ হাসিনাও আটকে রাখতে পারবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজের জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন।
ড. মইন খান বলেন, দেশে এখন একদলীয় বাকশালি শাসন ব্যবস্থা চলছে। একদিন বাকশালের পতন হয়েছিল। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার বাকশালের পতন ঘটানো হবে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, পাতানো নির্বাচনের ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। সরকার কৌশল করে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এবার তারা প্রহসনের নির্বাচনের জন্য খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ করেছে। জনগণ এসব মানবে না। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্রে বাঁধ দিলে যেমন টেকে না, তেমনি খালেদা জিয়াকে কারাগারেও রাখা যাবে না বেশিদিন। বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজন হলে কারাগার ভেঙে বিএনপির নেত্রীকে মুক্ত করবেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, অল্প সময়েই রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। সরকার কোনোভাবেই সমাবেশকে ঠেকাতে পারেনি। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হেলালুজ্জামান তালুকদার, ভিপি সাইফুল, নাদিম মোস্তফা, শফিকুল হক মিলন ও শাহীন শওকত প্রমুখ।