এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হয়ে, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করতো। বিভিন্ন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগাররা ‘টার্গেট অ্যান্ড কিলিং’র শিকার হয়েছেন এবিটি’র হাতে। অনেককে হত্যার চেষ্টা করেছে তারা। এই জঙ্গিদের টার্গেটে ছিলেন একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকও। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তার আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১।
গ্রেপ্তাররা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে র্যাব জানিয়েছে। বিকালে তাদের আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর র্যাবকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তারা।
কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় গত জুলাই মাসে বিয়ে সংক্রান্ত একটি হাদিসের ব্যাপারে ছাপানো লেখায় ক্ষুব্ধ হয় তারা। লেখাটিকে ইসলাম বিদ্বেষী উল্লেখ করে ওই সম্পাদককে টার্গেট করেছিল জঙ্গিরা। মুফতি মাহমুদ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশে যুক্ত হয়ে কথিত ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ অ্যাক্টিভিস্টদের উপর নজরদারি করতো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি সেলের সদস্যরা। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও বিরূপ মন্তব্য পোষণকারীদের চিহ্নিত করে ‘টার্গেট অ্যান্ড কিলিং’ এর মিশন সফল করার চেষ্টা করছিল তারা।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তাররা গোপনে সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করছিল। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছে সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও মুক্ত করবে। জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করার জন্য তারা অর্থ সংগ্রহ করছিল। সেইসঙ্গে এবিটির জন্য সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। পটুয়াখালীর একটি স্থান নির্ধারণ করেছিল প্রশিক্ষণের জন্য। এ জন্য অস্ত্রের অর্ডারও দিয়েছিল। তবে, তাদের এসব মিশন সফল করার আগেই তাদের গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হচ্ছে- বগুড়া জেলার ধুনটের চরমুখশিয়া গ্রামের শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মো. আম্মার হোসেন (২০), একই গ্রামের রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪), ভোলার বোরহানউদ্দিন থানার ফুলকাছিয়া গ্রামের মো. রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪) ও ভোলার চরফ্যাশন থানার হাছানগঞ্জের আব্দুল মালেক (৩১)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, ধারালো অস্ত্র ও পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারদের সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত ২৮শে জানুয়ারি রাজধানীর আশুলিয়া এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ এই চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার শাহরিয়ার নাফিস ওরফে আম্মার সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এপর দুই বছর বিভিন্ন মাদরাসায় অধ্যয়ন করে। পরে আবার হাইস্কুলে অধ্যয়ন শুরু করে। ২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমানের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এবিটিতে যোগদান করে। আমান তার নিয়ন্ত্রক। আমানের নির্দেশনায় চার-পাঁচটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার-প্রচারণা চালাতো। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের নজরদারি করতো। সেইসঙ্গে সদস্য সংগ্রহের কাজ করতো শাহরিয়ার। সাত-আট জনকে এবিটির সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ছদ্মবেশে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাস্তিক গ্রুপ নামে একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে যুক্ত হয় শাহরিয়ার। সেখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুসারে একজনকে হত্যা মিশনে নামে শাহরিয়ারসহ তিন জন। এ উদ্দেশে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্রসহ এবং অপর সদস্য বরগুনা থেকে বগুড়া গমন করেন। বগুড়া গমনের পর তারা অনলাইনে ফোন করে ওই অ্যাক্টিভিস্ট সদস্যকে সাক্ষাৎ করতে বলেন। কিন্তু ওই অ্যাক্টিভিস্ট সাক্ষাৎ না করায় তাদের মিশন ব্যর্থ হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক বলেন, রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখে অন্যদের সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করতো। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকে অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে নজরদারির নিয়ন্ত্রক আমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তার। আমানের মাধ্যমেই এবিটিতে যোগদান করে। বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে করতো রাসেল। তাদের কারাবন্দি নেতা জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করার জন্য অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছিল রাসেল। গ্রেপ্তার রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাস করে। পরে বগুড়া পলিটেকনিক্যালে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে রবিউল। গ্রেপ্তার আব্দুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেট গাড়িচালক। ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে এবিটিতে যোগদান করে। অল্পদিনেই সক্রিয় হয়ে উঠে মালেক।