এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করে কমনওয়েলভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের চিঠি দেবে বিএনপি। চিঠিতে তিনটি ইস্যুকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- গণতন্ত্রের সংকুচিত অবস্থা, বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ ও বিরোধী জোটের শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাবন্দি এবং জাতীয় নির্বাচন। ১৬ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ সম্মেলনকে সামনে রেখে গত শনিবার চিঠি দেয়ার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মঙ্গলবার চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে একটি ফলোআপ বৈঠকও হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠি কমনওয়েলথের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

সূত্র জানায়, শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলে কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য এবং বিএনপি নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরীন মুন্নী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল ও তাবিথ আউয়াল অংশ নেন। দলের অন্য সিনিয়র নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে চিঠি তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক রিয়াজ রহমানকে। চিঠির খসড়া নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করে কমিটি। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয় বিএনপি। চিঠিতে সংস্থা তিনটিকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপি, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে বাইরে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে, যা দেশের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। বিএনপি চায় নির্বাচনকালীন সময়ে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমতল মাঠ। এজন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। এছাড়াও তার সঙ্গে বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও গ্রেফতারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরা হয়।

শনিবারের বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের এক সদস্য জানান, বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশ। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সার্বিক বিষয়গুলো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের অবহিত করা প্রয়োজন বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। এরই প্রেক্ষিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কমনওয়েলথ সম্মেলনের আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার প্রধানদের কাছে চিঠি দেয়া হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্র্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ব্র“নেই, সাইপ্রাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যামেরুন, কেনিয়াসহ বর্তমানে এই সংস্থার সদস্য সংখ্যা ৫২। সংস্থার সচিবালয় লন্ডনে। সংস্থার চালকের আসনে রয়েছে যুক্তরাজ্য। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমনওয়েলথ অব নেশন্স গঠিত হয়। সদস্যভুক্ত দেশের সরকার ও দেশের মাঝে পরামর্শ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এটি গঠিত হয়েছে। সদস্যভুক্ত সরকারের কাছে এটি সামগ্রিকভাবে দায়বদ্ধ। পর্যবেক্ষক হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রতিনিধিত্বও করে থাকে। কমনওয়েলথের সব দায়বদ্ধতার কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের নানা অনিয়ম আর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র : যুগান্তর

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version