এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : দক্ষিণ চীন সাগর ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সামরিক তর্জন-গর্জনই জানান দিচ্ছিল দুই দেশের কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। আর এই হুমকি ধমকির শেষ গিয়ে ঠেকবে যুদ্ধে। এশিয়া বা আমেরিকার আহইলক শক্তিগুলোই শুধু নয়, বিশ্বশক্তির প্রায় সব অক্ষেই এ লড়াইয়ের সজাগ গুঞ্জন চলছিল। কিন্তু সম্ভাব্য সে সামরিক লড়াইয়ের আগেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে দুই দেশের। সোমবার মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক বসিয়ে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যুদ্ধে পা বাড়াল চীন। বিশ্ব রাজনীতিতে এখন একটাই জিজ্ঞাসা জিতবে কে? যুক্তরাষ্ট্র না চীন?

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাস করেন- চীনের কাছে বাজার খুলে দিয়ে আমেরিকার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তিনি হিসাব দিচ্ছেন এক ২০১৭ সালে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ৮০০ বিলিয়ন (৮০,০০০ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। আর এই ঘাটতির প্রধান কারণ চীনের সাথে বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতা।

তার কথা- চীনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নানা কারসাজি করে শুধু জিনিস বিক্রি করা যার পরিণতিতে আমেরিকার শত শত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাতসহ শত শত চীনা আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই সব পণ্যের আমদানি মূল্য ৬,০০০ কোটি ডলার হতে পারে।

সোমবার এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন মার্কিন মদ, শূকরের মাংস, ফলসহ ৩০০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক বসিয়েছে। বিশ্বের একনম্বর এবং দুই নম্বর অর্থনীতির মধ্যে এই বাণিজ্যযুদ্ধের পরিণতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। ট্রাম্প এই উদ্বেগকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন- বাণিজ্যযুদ্ধ ভালো এবং আমেরিকার তাতে কোনো ক্ষতি নেই, বরঞ্চ লাভ। কিন্তু এই যুদ্ধে কি সত্যিই তিনি জিতবেন? অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, বাণিজ্যের লড়াই এমন এক লড়াই যেটাতে জেতা ভীষণ কঠিন। কেন- তার পাঁচটি কারণ দিয়েছেন নিউইয়র্কে বিবিসির বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদদাতা নাটালি শারম্যান।

১. আমেরিকায় কর্মসংস্থান কমবে

ট্রাম্প মনে করছেন বাড়তি আমদানি শুল্ক বসালে দেশের ভেতর ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে এবং চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, অতীতে বহুবার ইস্পাত শিল্পকে এভাবে সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ইস্পাত শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন কমছে। ২০০২ সালে একটি গবেষণা সংস্থার হিসাবে, ইস্পাত আমদানির ওপর আমদানি কর বসালে বড় জোর ৩৫০০ মানুষের চাকরি বাঁচবে।

২. আমেরিকায় দাম বাড়বে

আমেরিকার ইস্পাত শিল্পে বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা ১,৪০,০০০। কিন্তু অন্য যেসব শিল্প ইস্পাতের ওপর নির্ভর করে সেগুলোতে শ্রমিকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে সেই সব ইস্পাতনির্ভর শিল্প। খুচরা বিক্রেতাদের সমিতি বলেছে- ট্রাম্প আসলে সাধারণ আমেরিকান পরিবারগুলোর ওপর কর বসাচ্ছেন।

৩. মার্কিন মিত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পাল্টা জবাব দেবে

আমেরিকা সবচেয়ে বেশি ইস্পাত আমদানি করে কানাডা থেকে। তারপর ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মেক্সিকো থেকে। এসব দেশ আমেরিকার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক এবং সামরিক মিত্র। ফলে ইস্পাতের ওপর শুল্ক বসালে এরা ক্ষেপে যাবে। আগামী দিনগুলোতে হয়তো দেখা যাবে, কানাডা বা ইউরোপ এই বাড়তি শুল্ক থেকে অব্যাহতি চাইবে। না পেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ট্রাম্প বিশ্বাস করেন মিত্র দেশগুলোর মাধ্যমে আসলে চীন আমেরিকার বাজারে সস্তা ইস্পাত ঢোকাচ্ছে, ফলে তাদের ওপরও শুল্ক না চাপিয়ে উপায় নেই।

৪. চীনের হাতে পাল্টা অস্ত্র

গাড়ি, কৃষি-শিল্পের মতো যেসব আমেরিকান শিল্প চীনে বাজার পাচ্ছে বা চায়, তারা এই লড়াইয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। তারা ভয় পাচ্ছে চীন পাল্টা জবাব দেবে এবং দিতে শুরুও করেছে। সোমবার মদ এবং শূকরের মাংসসহ ১৮০টির মতো মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছ চীন।

৫. অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর প্রভাব

ট্রাম্প চাইছেন আমেরিকার রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে। কিন্তু এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া ধারণা করা এ মুহূর্তে কঠিন। প্রিন্সটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনেথ লোয়ান্ডে বলছেন, তার কারণ নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে হোয়াইট হাউসের নীতিনির্ধারকরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আর সংসদে তাদের দলের সদস্যদের বেশির ভাগই তীব্র সমালোচনা করছেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version