এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপির নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য ব্যাংক হিসাব নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপি দাবি করেছে, মিথ্যা সংবাদ করার জন্য আওয়ামী লীগ ২৫টি পোর্টাল করেছে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অনলাইন পোর্টালগুলোর মনগড়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দুদক এ অনুসন্ধান শুরু করেছে। এটা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টের নীলনকশার অংশ। মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন।

ব্যাংক হিসাবে ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ অভিযোগে বিএনপির যেসব নেতার বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এম মোর্শেদ খান ও তার ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান, আবদুল আওয়াল মিন্টু ও তার ছেলে তাবিথ আউয়াল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। দুদকের এ অনুসন্ধানের প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে বাধাদান এবং বিএনপিকে কালিমালিপ্ত করতেই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। যা মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা অপপ্রচার। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাকে নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্টের কথা প্রথমে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল লিখেছে এবং পরবর্তী সময়ে দুদক যে অভিযোগ আমলে নিয়েছে সব ভিত্তিহীন। কারণ আমি, এমনকি আমার পরিবারের কোনো সদস্যের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে কোনো অ্যাকাউন্ট অতীতেও ছিল না, এখনও নেই। তাই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কোনো ব্রাঞ্চে আমার হিসাব খোলা হয়েছে, কত টাকা গচ্ছিত রয়েছে সরকার ও দুদককে তা জানানোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলা ইনসাইডার’ কে বা কারা চালায় আমরা জানতে চাই। এরা কী গোয়েন্দা সংস্থার কোনো প্রতিষ্ঠান নাকি সরকারের, তা পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেয়া দরকার। কেননা কথিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল যে রিপোর্ট বেশ কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছে সোমবার সেই রিপোর্ট আমলে নিয়ে দুদক প্রাথমিকভাবে হ্যান্ডনোট দিয়েছে। এটা কখনও একটি দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না। খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে দলের নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য নীলনকশার অংশ হিসেবে এই অপপ্রচার। সরকারের এই নীলনকশা বাস্তবায়িত হবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সারা জীবনে সাত কোটি টাকা লেনদেন করেছি কি না, মনে হয় না। আসলে এটা নোংরা রসিকতা। দুদক মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করেছে। তারা স্বাধীন বলে দাবি করে, আসলে কি স্বাধীন? আমাদের বিরুদ্ধে লিখে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নীতিভ্রষ্ট করা যাবে না। ঐক্য বিনষ্ট করা যাবে না। তিনি বলেন, অনলাইন পত্রিকা বা মিডিয়া আছে বলে যা খুশি তা লেখার অধিকার কারও নেই। আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে,

আত্মীয়স্বজন আছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি-সংগ্রাম করে এ জায়গায় এসেছি। আমি চাইব, হয় তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে, না হয় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার জন্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যেতে হলে তাদের এ ধরনের কাজ করতে হবে। মিথ্যা নিউজ করার জন্য আওয়ামী লীগ ২৫টি পোর্টাল করেছে। প্রতিনিয়ত তাদের যে মিথ্যাচার, তার মধ্যে এ নিউজ একটি। এটাই শেষ নয়, ভবিষ্যতে আরও অনেক নিউজ দেখা যাবে। সরকার দুদকের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমি ব্যবসা করি, লেনদেন হতেই পারে। এখানে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট লিখেছে, আমি সব কটি দেখিনি। এমনও দেখানো হয়েছে, যেখানে আমার কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। সংবাদটা পুরোপুরি মনগড়া। কেন এই সংবাদের উৎপত্তি করা হল, সেটা জনগণের বিচার করা উচিত। তিনি বলেন, বলা হচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ প্রতিবেদন। গোয়েন্দা সংস্থার উচিত মানুষকে সত্যটা জানানো। কারও বিশেষ কাজে ব্যবহৃত না হওয়া। আর দুদককে বলব, জনগণের টাকায় আপনাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জনগণকে হয়রানি করবেন না। বরং সুষ্ঠু তদন্ত করুন।

আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, আমাদের মিথ্যা মামলায় জেলে নিলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্য গঠন করে সরকারের পতন ঘটাবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে বন্দি গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা দিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতেই দুদককে কাজে লাগানো হচ্ছে। হঠাৎ করে বিএনপির সিনিয়র নেতা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে অবৈধ টাকা লেনদেনের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যা মিথ্যা এবং বানোয়াট। তিনি বলেন, আসলে সরকার দুদককে দিয়ে নতুন প্রকল্প খুলেছে। তারা আবারও একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সেটা তারা করতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান প্রমুখ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version